সাংবিধানিক জ্ঞান, তথ্য, গবেষণা এবং উচ্চশিক্ষা কমিশন

মুঃ আবদুল হাকিম
বিগত পঞ্চাশ বছরে আমরা প্রচুর অবকাঠামো উন্নয়ন করেছি। রাস্তাঘাট, ব্রীজকালভার্ট এবং আকাশচুম্বী অট্টালিকার এত উন্নয়ন হয়েছে যে আগামী পঞ্চাশ বছর এ খাতে একটু কম উন্নয়ন করলেও দেশ চলবে । এ খাতে উন্নয়ন করলে জমি, রড, সিমেন্ট, বালি এবং অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীর দাম হুহু করে বাড়ে। এখন সবার আগে দরকার মানুষের উন্নয়ন। অর্থাৎ আমাদের সংবিধানে বর্ণিত সদিচ্ছা প্রণোদিত নাগরিক তথা মানব সম্পদ উন্নয়ন যা হবে নাগরিক ক্ষমতায়নের মূলসূত্র।একাডেমিয়ার প্রতিভা ছাড়া স্বার্থান্বেষী মহল সামাল দেয়া অসম্ভব।উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি উন্নীত মানুষ। অর্থাৎ এমন মানুষ নির্মাণ করতে হবে যাদের চাকুরির গ্যারাণ্টি থাকবে। কিন্তু তারা বিদেশে টাকা পাচার করবে না, ব্যাংক লুট করবে না, শেয়ার মার্কেট লুট করবে না, প্রকল্পের টাকা নয়ছয় করবে না, নিয়োগ বা টেণ্ডার বাণিজ্য করবেনা, গ্রেফতার বা জামিন বাণিজ্য করবেনা। যদি কেউ করে কোনোভাবেই পার পাবেনা। তাদের মেধা এবং আয় স্বচ্ছতা থাকবে। তাহলে মানুষের দাম হুহু করে বাড়বে। এজন্য সবার আগে দরকার সোনার বাংলার সোনার মানুষের রাজনীতি। বিশুদ্ধজ্ঞান, বিশুদ্ধ তথ্যএবং বিশুদ্ধ গবেষণা ছাড়া বিশুদ্ধ এবং যোগ্য মানুষ তৈরী করা যাবে না। জাতীয়তাবাদ,গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্রএবং ধর্মনিরপেক্ষতার মুলনীতির ভিত্তিতেই সোনার মানুষ তৈরী করা সম্ভব। এজন্য লাগবে স্বাধীন গণমাধ্যম, স্বাধীন সোসাল মিডিয়া, স্বাধীন সামাজিক বিজ্ঞান পরিষদ, স্বাধীন বিশ্ববিদ্যালয় , কলেজ এবং স্কুল ইত্যাদি। এজন্য এসব কাজগুলো মন্ত্রণালয় থেকে কমিশনে নিতে হবে।বিশুদ্ধতা আনার জন্যই সাংবিধানিক পদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দলীয় বিবেচনার কোনো অবকাশ রাখা সমীচীন নয় ।
বর্তমানে তথ্য নিয়ে কাজ করছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, তথ্যঅধিদপ্তর, গণযোগাযোগ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল, প্রেস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা, গণ মাধ্যম ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন, তথ্যকমিশন, পরিসংখ্যান এবং তথ্যব্যবস্থাপনা বিভাগ। প্রতিটি সরকারী এবং আধাসরকারী অফিসে তথ্যসংগ্রহ এবং সংরক্ষণের জন্য শাখা আছে। কিন্তু কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবেও এর সাথে সম্পৃক্ত নয়।অর্থাৎ সিলেবাস বা কারিকুলাম এবং আমলের মাঝে বিস্তর ফারাক।সর্বোচ্চ মানের শিক্ষক নিয়োগ দিতে চাইলে এ নিয়োগ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে রাখা সমীচীন নয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের হাতেও এটি নেই। জ্ঞান,তথ্য এবং শিক্ষাকে দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত রাখার জন্য সাংবিধানিক উচ্চ শিক্ষা কমিশনকে এ নিয়োগের দায়িত্ব অর্পণ করা যেতে পারে। তবে দলীয় সরকার শিক্ষা এবং তথ্য আইনের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। কিন্তু প্রত্যক্ষভাবে পারবে না। সকল সাংবিধানিক কমিশনের ক্ষেত্রে দলীয় সরকারের এ জাতীয় নিয়ন্ত্রণ থাকবে। রাজপথ দখল এবং শোডাউনের রাজনীতিতে সংঘাত এবং রক্তপাত অনিবার্য।হয় মারো নয় মর এভাবে জীবিত মানুষকে লাশ বানানো কোনো সুস্থ রাজনৈতিক দর্শন হতে পারেনা।এতে দলীয় কর্মীদের রাজনৈতিক মতাদর্শের নামে নর বলি দেয়া হয়। দুর্নীতি এবং লুটপাটের পথ সুগম করার জন্য এখানে জনগণকে বলির পাঁঠা হিসেবে ব্যবহার করা হয় মাত্র। রাজনীতি প্রকৃতপক্ষে ভাল আইন এবং পলিসি তৈরীর পেশা যা সামাজিক বিজ্ঞানের ব্যাপক গবেষণা ছাড়া অসম্পূর্ণ। এটি একটি বুদ্ধিবৃত্তিক পেশা যার সাথে থাকতে হবে বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের সার্বক্ষণিক অংশগ্রহণ এবং নজরদারি। এটি খুন হওয়া এবং খুন করার পেশা নয়।এটি ভোগের পেশা নয়। ত্যাগের পেশা।আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক দেউলিয়াপণার জন্য আমাদের রাজনীতি নলেজ পলিটিক্স থেকে ক্রমশঃ গ্যাংপলিটিক্সে রূপান্তরিত হচ্ছে।মেধা নয় গায়ের শক্তি বা মাইর দেয়ার শক্তি দেখে পদ দেয়া হচ্ছে। বুদ্ধিবৃত্তির উৎকর্ষ দিয়েই এটাকে আবার নলেজ পলিটিক্সে ফিরিয়ে আনতে হবে। লোভ রিপুর চর্চামুক্ত করতে হলে রাজনীতিকে আর্থিক সংশ্লিষ্টতা মুক্ত করতে হবে। এজন্যই দেশে স্বাধীন এবং সাংবিধানিক উচ্চশিক্ষা কমিশন অপরিহার্য।
দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সর্বদলীয় সমঝোতা বা কন্সেন্সাস ছাড়া সংবিধানে এ জাতীয় কমিশন গঠন করা সম্ভব নয়।তা না হলে আগের মত সংঘাত,সংঘর্ষ এবং রক্তপাত অব্যাহত থাকবে।এখন রাজনীতি করা মানে জীবনবাজি রাখা। এক্ষেত্রে সন্ত্রাসীদের সাথে পাল্লা দিয়ে ভাল মানুষ টিকে থাকতে পারে না । রাজনীতির সুস্থতা এবং বিশুদ্ধতা নির্ভর করছে দলগুলো লোভ সংশ্লিষ্ট ক্ষমতাগুলো ছাড়তে মানসিক ভাবে কতটুকু প্রস্তুত তার উপর। ছাড় দেয়ার মানসিকতা না থাকলে সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রশাসন এবং বিচার কায়েম করা যাবে না।
এটি মানব সম্পদ উন্নয়ন কমিশন হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জ্ঞান মম্দির বানাবে এবং সকল শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য সিলেবাস বা কারিকুলাম প্রস্তুত করবে। সিলেবাসের জন্য দেশে আলাদা কোনো কারিকুলাম বোর্ড থাকবে না । বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্জিত জ্ঞান, মেধা এবং প্রজ্ঞার মাধ্যমে জনগণ প্রভূত কল্যাণ লাভ করবে।এরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়োগ পদোন্নতির দায়িত্ব পালন করবে।এরা ছাত্রদের কর্মসংস্থানের সর্বাত্মক দায়িত্ব পালন করবে। এরা প্রাইভেট সেক্টরের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ছাত্রদের কর্মসংস্থানের মহাপরিকল্পনা প্রস্তুত করবে। সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বচ্ছ এবং দায়বদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় একাডেমিক উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এরা জনসংযোগ,গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করবে যাতে কোনো দল এদেরকে নিজেদের স্বার্থে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে । কিংবা কোনো স্বার্থান্বেষী মহল এদেরকে যেনো প্রোপাগান্ডা মেশিনের মত ব্যবহার না করে। যাতে দলীয় সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলো এদের মাধ্যমে জনগণকে ভুল সংকেত দিতে না পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী এবং শিক্ষকগণ জ্ঞান অর্জনের অংশ হিসেবে জনগণের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহে সর্বদা ব্যস্ত থাকবে এবং গণসম্পৃক্ত থাকবে। শিক্ষকদের সাহায্য নিয়ে তারা জনগণের কাছে মানবাধিকার, আইনের শাসন এবং সংবিধানের গ্রহণযোগ্যতা ব্যাখ্যা করবে। কোনো সন্ত্রাসী চক্র বা স্বার্থান্বেষী মহল তাদের কর্মকান্ডে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারবে না। সন্ত্রাস এবং দুর্নীতির অপকারিতা তারা জনগণের কাছে চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করবে। সেই সাথে তারা খারাপ মানুষ বা ক্রিমিনালদের প্রফাইল প্রস্তুত করবে। জনগণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কোনো দেয়াল থাকবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে জনগণের নিবিড় এবং অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক স্থাপিত হবে। এ কমিশন সরকারী , আধাসরকারী এবং বেসরকারীপ্রতিষ্ঠানের যাবতীয় তথ্যের ফরম্যাট তৈরি করবে। এ কমিশন হবে সকল নির্ভুল সেকেন্ডারি তথ্যের ডিপো । দেশের সকল তথ্য উপাত্তের সংগ্রহ এবং সংরক্ষণের দায়িত্ব তাদের। তারা এই তথ্য উপাত্ত প্রাইভেট সেক্টরে বিক্রি করতে পারে। তারা এইসব তথ্য উপাত্ত এবং জ্ঞান গবেষণার ফলাফল চাহিদা মাফিক গণমাধ্যমে সরবরাহ করবে।বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সরবরাহ করবে । গোপনীয়তার কোনো দেয়াল থাকবে না । এ কমিশন অবাধ জ্ঞান এবং তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করবে। তথ্য পেতে কাউকে বেগ পেতে হবে না। জ্ঞানী গুণীরা জনস্বার্থে এ সকল তথ্য উপাত্ত নিয়ে দিন রাত গবেষণা করবে। এসব ক্ষেত্রে দলীয় সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না। একটি সাংবিধানিক কমিশন আরেকটি সাংবিধানিক কমিশনের কার্যক্রমে সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
জ্ঞান,তথ্য,গবেষণা এবং উচ্চশিক্ষা কমিশন তাদের বিচক্ষণতা, প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা দিয়ে বাংলাদেশকে উন্নয়ন এবং সুশাসন উপহার দিবে।তারা নিশ্চিত করবে প্রতিটি বিশ্বর্যাংকিং এ বাংলাদেশ যেন উপরের দিকে থাকে। বাংলাদেশের সকল মেধা, সততা, দক্ষতা এবং দেশপ্রেমকে তারা উন্নয়নের কাজে লাগাবে। যাতে নাগরিক জীবন উন্নত, সুন্দর, সাবলীল এবং সুখময় হয়ে যায়। কোটি কোটি তথ্য, উপাত্ত, জ্ঞান ও গবেষণায় তারা দেশকে ভরে দেবে। প্রতিটি কাজের জন্য তারা নাগরিক আদালত এবং সংসদে জবাবদিহিতা করবে। গণমাধ্যমের কাছে কোনো তথ্য তারা লুকিয়ে রাখবে না। সকল তথ্য এবং জ্ঞান তারা জনগণের অবগতির জন্য গণমাধ্যমে প্রকাশ করবে। যাতে দেশের মালিক হিসেবে প্রত্যেক নাগরিক সঠিক তথ্য ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হয়। যাতে কোনো নাগরিক ধর্ম বা দলকানা না হয়। তারা দেশকে দিক নির্দেশনা দিবে।আগামী প্রজন্ম তাদের চিন্তা চেতনা ও যত্নে লালিত পালিত হবে। প্রত্যেক নাগরিককে তারা দেশমুখী এবং উন্নয়নমুখী করবে। জ্ঞান ও তথ্যের মহিমাকে তারা সবার উপরে স্থান দিবে। জ্ঞান ও তথ্যকে তারা কারো স্বার্থে বিকৃত করবে না।
বিজ্ঞান মনস্কতা কে তারা উৎসাহিত করবে। তাদের হাতে থাকবে সত্যিকার জ্ঞানের আলো। সেই আলো সর্বদা প্রজ্জ্বলিত রেখে তারা পথ চলবে। সমস্ত জনগণের সকল তথ্য তাদের হাতে থাকবে। তথ্য, জ্ঞান এবং গবেষণার মাধ্যমে কমিশন রাষ্ট্রকে জবাবদিহিতার রাডারে আবদ্ধ রাখবে। তথ্য, জ্ঞান ও গবেষণার ফলাফলের জন্য গণমাধ্যম তাদের কাছে ধর্ণা দিবে। কোনো স্বার্থান্বেষী মহল জ্ঞান ও তথ্যের দখল নিয়ে দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবে না। তারাই দেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সূচনা করবে এবং তা অনুশীলন করবে। জনগণকে সজাগ ও সচেতন করবে। গ্রাজুয়েট পপুলেশনকমিশনের রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। তারা শিক্ষার বিশ্বমান বজায় রাখবে। সারা পৃথিবীর যাবতীয় জ্ঞান, তথ্য এবং গবেষণাকে তারা ধারণ করার চেষ্টা করবে। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোকে তারা মানুষ তৈরির শ্রেষ্ঠ কারখানায় রূপান্তরিত করবে। তারা শুধু উচ্চ শিক্ষিত মানুষ তৈরী করবে নাতাদের যথাযথ কর্মসংস্থানের বন্দোবস্তও করবে। কর্মসংস্থানও তাদের দায়িত্বের অন্তর্ভূক্ত থাকবে। যাতে একজন উচ্চ শিক্ষিত মানুষও দেশে বেকার জীবন যাপন না করে।
প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসংস্থান বিভাগ থাকবে। তারা উচ্চ শিক্ষা কমিশনের সাথে সমন্বয় করে সবার কাজের ব্যবস্থা করবে অথবা অন্তর্বতীকালীন ভাতার ব্যবস্থা করবে। প্রত্যেক গ্রাজুয়েট শিক্ষা অনুসারে এই ভাতা পাবে। কেউ বঞ্চিত হবে না। দেশে অথবা বিদেশে তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের সকল সমস্যার সমাধানের ফর্মূলা তারা বের করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্র শিক্ষক নির্দলীয় এবং নিরপেক্ষ অবস্থান নেয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবে। সকল দলের মধ্যে এ বিষয়ে একটি কনসেন্সাস থাকতে হবে। সামরিক এবং বেসামরিক আমলাতন্ত্রকেও এই জ্ঞান,তথ্য এবং গবেষণা প্রক্রিয়ার সাথে ধীরেধীরে সম্পৃক্ত করতে হবে। বাংলাদেশকে সন্ত্রাসের পথ থেকে জ্ঞানের পথে আনার ক্ষেত্রে এর কোনো বিকল্প নেই।রাষ্ট্রের শক্তিশালী স্তম্ভ হিসেবে একাডেমিয়াকে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হলে দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হতেপারে।দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সামরিক এবং বেসামরিক আমলাতন্ত্রকেও উচ্চশিক্ষার পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। জ্ঞান বিজ্ঞানের বিশুদ্ধ চর্চাকে পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে দেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব অর্থনীতি নির্মাণ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধু গ্রাজুয়েট উৎপাদন করবে না। তাদের কর্মসংস্থানের দায়িত্বও তাদের পালন করতে হবে।প্রাইভেট সেক্টর উন্নয়নের মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রাইভেট সেক্টর বান্ধব হতে হবে। তারা গ্র্যাজুয়েট ডিমান্ড প্রস্তুত করবে।বাজারমুখী এবং কর্মসংস্থান মুখী উচ্চ শিক্ষা চালু করতে হবে।সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্পোরেট অর্থনীতির জন্য মানবসম্পদ তৈরী করবে।
উচ্চ শিক্ষা আয় বৈষম্য কমাবে। মানবিক সংবেদনশীলতা এবং নৈতিক চর্চার উন্নয়ন ঘটাবে। মধ্যবিত্ত সমাজকে সাংস্কৃতিকভাবে আরো উন্নত করবে। মানবসম্পদ উন্নয়নকে অগ্রাধিকার প্রদান করবে।দারিদ্র্য বিলুপ্ত করবে। বুদ্ধিবৃত্তির ভ্যালু সংযোজন করবে। সহজীকরণের মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে। সুদের হার সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে।শিক্ষিত যুবকদের কর্মসংস্থানের বাধ্যবাধকতা থাকলে সরকার কর হার ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব করতে বাধ্য হবে।খেলাপী ঋণ শূন্যের কৌঠায় নামিয়ে আনতে হবে। প্রয়োজন হলে ব্যাংক পুলিশ এবং ব্যাংক আদালত গঠন করতে হবে। ব্যাংকিং সেক্টরে সর্বোচ্চ শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে হবে। দুর্নীতিকে শূন্যের কৌঠায় নামিয়ে আনতে হবে। গ্র্যাজুয়েট পপুলেশনের শতভাগ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। এইসব গুরুদায়িত্বসমূহ একাডেমিয়া পালন করবে। তাদের জ্ঞানগরিমা, তথ্য উপাত্তের চুলচেরা বিশ্লেষণ এবং সমাজ গবেষণার মাধ্যমে সমাজ ব্যবসা এবং বিনিয়োগবান্ধব হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞান সমাধান অন্বেষা এবং প্রয়োজনীয় আইন ও নীতি সংস্কারের জন্য সুপারিশের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
একাডেমিয়াকে পূর্ণ সমর্থন যোগাবে সামরিক এবং বেসামরিক আমলাতন্ত্র।যাতে মুক্তবুদ্ধির চর্চায় একাডেমিয়া নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। একাডেমিয়া তাদের পারদর্শিতা দিয়ে জনগণের মন জয় করবে এবং নেতৃত্বের আসন অর্জন করবে। জনগণের সমস্যাগুলোর সঠিক সমাধান খুঁজে বের করার মাধ্যমে। রাষ্ট্র ও সমাজের শৃংখলায় হবে তাদের যোগ্যতা এবং দক্ষতার প্রমাণক। জ্ঞান, তথ্য এবং নৈতিকতার কেন্দ্রবিন্দু হবে বিশ্ববিদ্যালয়। উদ্ভাবনের কেন্দ্রবিন্দু হবে বিশ্ববিদ্যালয়। রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হবে বিশ্ববিদ্যালয়। এটা হবে বিশুদ্ধ রাজনীতির উৎসমুখ।সৃজনশীলতা এবং মননশীলতার উৎস মুখ। সাংবাদিকতারও উৎসমুখ। জ্ঞাণীগুণীদের মিলনস্থল বা মিলনমেলা। একজন চ্যান্সেলর এবং দুইজন ভাইস চ্যান্সেলর সিনেট কতৃক দুই বছরের জন্য নির্বাচিত হবে। ডীন, প্রক্টর এবং প্রভোষ্ট মনোনীত অথবা নির্বাচিত হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হবে খোলামেলা বিতর্কস্থল। সন্ত্রাস, দুর্নীতি এবং সকল অপরাধের নিরাময় এবং বিনাশকেন্দ্র। লাইভ সমাজ চর্চার কেন্দ্র। ক্যাম্পাসের বাইরের বাস্তবতাকে ভিতরে এনে দেখা এবং বিশ্লেষণ করা হবে এখানে। এটি হবে শিল্প, সাহিত্য এবং সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র।গবেষণার কেন্দ্র। বেসামরিক আমলাতন্ত্রের সূতিকাগার। সেনা কর্মকর্তাগণ এখানে পড়ার কোনো সুযোগ না পেলে ও তাদের নিজস্ব বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। বেসামরিক আমলাগণও উচ্চ শিক্ষিত। কাজেই এখানে উচ্চ শিক্ষিতদের সেমিনার, সিম্পোজিয়াম এবং কর্মশালার ঘনঘন আয়োজন হতে কোনো বাধা নেই। সামরিক এবং বেসামরিক আমলাতন্ত্রের সমর্থন পেলে ছাত্রশিক্ষক গণ তাদের নিরপেক্ষ এবং নির্দলীয় জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে দেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নির্দ্বিধায় নিয়ে যেতে পারে। সামাজিক বিজ্ঞান চর্চাকে একটা নতুন মহিমা এবং মাহাত্ম্য আরোপ করা যায়। এছাড়া দেশে সন্ত্রাস এবং দুর্নীতির গডফাদারদের কোনো ক্রমেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।রাজনীতির নামে এখানে কোনো নাশকতা এবং পৈশাচিক কর্মকান্ড চলতে পারে না।কোনো দলের দানবদের এটা অভয়ারণ্যহতে পারে না । তাদের খুন খারাবি থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য সর্বদলীয় সমঝোতার ভিত্তিতে একটি ফর্মূলা বের করতে হবে। জ্ঞান ও শক্তির সমন্বিত প্রয়াস ব্যতীত সন্ত্রাস ও দুর্নীতি দেশ থেকে নির্মূল করা সম্ভব নয়। পীস মীল কোনো উদ্যোগ কোনো ক্রমেই সফল হবে না।গণমাধ্যম এবং তথ্যভান্ডার নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। জনপ্রশাসন এবং বিচার বিভাগকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে।
জনগণকে নানান মডেলের উন্নয়ন সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। এতে জনগণের মধ্যে ভালটা গ্রহণ করার সক্ষমতা জেগে ওঠবে।বারংবার সমাজ গবেষণার ফলে সমাজের প্রকৃত চিত্রটা জনগণ খুব সহজে অনুধাবন করতে সক্ষম হবে। গণসক্ষমতার বিভিন্ন কর্মকান্ড এখানে পরিচালিত হবে।এখানে ঘন ঘন বইমেলার আয়োজন করতে হবে। যাতে বিভিন্ন চিন্তাশীল এবং সৃজনশীল মানুষের এখানে আগমণ ঘটে। শৃংখলা বিধানের জন্য এখানে ক্যাম্পাস পুলিশ এবং আদালত থাকবে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনা থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর সরকার বা দলের কোনরুপ নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। নির্দলীয়তা এবং নিরপেক্ষতার সংস্কৃতি ক্যাম্পাস থেকেই শুরু করতে হবে। এখান থেকে এ সংস্কৃতি কলেজ এবং স্কুলে ছড়িয়ে পড়বে। ফলে শিক্ষা ব্যবস্থা রাহু বা অক্টোপাশ মুক্ত হবে।
এরপর পেশাজীবীদের নির্দলীয় এবং নিরপেক্ষ করতে হবে। কোনো দলের লেজ বা অংশ হিসেবে নয়। তারা আপার হাউজ হিসেবে কাজ করবে। এতে তাদের পেশাগত ন্যায্য দাবী দাওয়া আদায় সহজ হবে। কোনো মাধ্যম ব্যবহার করা লাগবে না। সামরিক এবং বেসামরিক আমলাতন্ত্র তাদের এ কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে পারে। এর ফলে রাজনীতিতে ভাল লোকের আমদানি হবে এবং খারাপ লোক রাজনীতি থেকে চিরতরে বিদায় হবে। সন্ত্রাস, দুর্নীতি, অপরাধ এবং বিদেশে টাকা পাচার কমবে।শোষণ বঞ্চনার চির অবসান সূচিত হবে।জনগণ হতাশা থেকে মুক্তি পাবে। অপমৃত্যু কমবে এবং জনগণ ন্যায় বিচারের স্বাদ গ্রহণ করবে। বিচার হীনতা দূর হবে।
একাডেমিয়ার ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে দলমত নির্বিশেষে সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে।কোনো দলকে সমঝোতা প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা সমীচীন নয়।ঘন ঘন গোপন অথবা প্রকাশ্য সংলাপ করে তাদের নিজেদের মধ্যে সমঝোতা নির্মাণ করতে হবে । এ কাজটি নির্বাচন কমিশন দিয়ে হবে না। নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানে শুধু নির্বাচন পরিচালনা করে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত করবে।বাজেটের কথা চিন্তা না করে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে রাজনীতিতে শৃঙ্খলা আনার জন্য সাংবিধানিক রাজনৈতিক কমিশন গঠন করতে হবে।অসীম ক্ষমতা নিয়ে জবাবদিহিতার বাইরে থেকে জনগণকে শাসন করার মনোবৃত্তি থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। অন্যকে নেতা হবার সুযোগ দিতে হবে এবং ধীরে ধীরে জবাবদিহিতায় অভ্যস্ত এবং সম্মত হতে হবে।আমাদের দেশে জনপ্রতিনিধিত্ব আইন আছে। কিন্তু রাজনৈতিক দল গঠন এবং পরিচালনার জন্য কোনো আইন নেই।ইশতেহার ঘোষণার ট্র্যাডিশন থাকলেও তা বাস্তবায়নে দলকে বাধ্য করার কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। স্বচ্ছ আইন না থাকার দরুণ ক্ষমতা অপব্যবহারের প্রচুর সুযোগ আছে। রাজনীতি খুব লোভনীয় হলে খারাপ লোকের আগমণ এখানে ঠেকানো যাবে না এবং ভাল লোক পরিবেশ দেখে সটকে পড়বে। জবাবদিহিতা জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতা খর্ব করবে না । বরং রাজনীতির প্রতি খারাপ লোকের আকর্ষণ কমিয়ে দিবে।আবার আইনে প্রচুর ক্ষমতা থাকলে দুর্নীতির বড় বড় সুযোগগুলো থাকবেই। রাজনীতি, মতাদর্শ এবং রাজনৈতিক দল নিয়ে দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আজকাল আর গবেষণা হয় না। গবেষণার কোনো পরিবেশ নেই। অবসরপ্রাপ্ত সামরিক এবং বেসামরিক আমলাতন্ত্র গণতান্ত্রিকভাবে শক্তিশালী নয়।
শিক্ষাংগনে বড় বড় রাজনৈতিক দলের অংগ সংগঠন থাকলে সেখানে মুক্তভাবে জ্ঞান চর্চা করা অসম্ভব। সেখানে সর্বদা একটা ভয় ভীতির পরিবেশ বিরাজ করবে। সেখানে কোনো দলীয় রাজনীতি না থাকলে সকলে নির্ভয়ে এবংনিঃশংকচিত্তে ভিন্নমত প্রকাশ করবে। ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা ছাড়া জ্ঞানচর্চা নিরর্থক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অভিভাবকত্বে এটা ঘটবে ।
বর্তমান বাস্তবতা হল বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি ক্রিমিনালদের বাগে আনতে পারছেনা। বরং দেশের রাজনীতিও তারা ধীরে ধীরে দখল করছে।আইনী কাঠামোর জন্য একাজে পুলিশ এবং উকিল সম্মিলিতভাবে তাদের দমনে খুব একটা সফল হচ্ছেনা।ভাল মানুষেরা আর রাজনীতিতে ঢুকতে পারছে না। অথবা ঢুকতে পারলেও টিকতে পারছেনা। ক্রিমিনালরা শুধু নিজে ক্রিমিনাল থাকছে তা না নিজনিজ এলাকায় তারা কিশোর গ্যাং তৈরি করছে। তলে তলে আর্থিক লাভ এবং রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের জন্য কিছু নেতা ছিনতাইকারী, ডাকাত, সমাজবিরোধীশক্তি, গুন্ডা, মাস্তান, চাঁদাবাজ,ইত্যাদির গড মাদার বা গড ফাদার হিসেবে কাজ করছে। শুনতে খারাপ লাগলে ও বাস্তব সত্য এটাই যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্রিমিনালরা এদেশে ভাল এবং মেধাবীদের শাসন করছে। মিডিয়াও বাধ্য হয়ে তাদের সব কাজে সাহায্য করছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আর কোনো ভরসার জায়গা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়েরও অনেক নেতিবাচক দিক আছে। শিক্ষকেরা লেখাপড়াই মনোযোগী নয়। কিছু প্রাপ্তির আশায় কেউ কেউ দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি করতে বেশি আগ্রহী। ইদানীং বহু অযোগ্য শিক্ষক শুধু দলবাজি করে নিয়োগের সুবিধা লাভ করেছে। ছাত্ররাও লেখাপড়া না করে মাস্তানি এবং টেন্ডারবাজি করতে ব্যস্ত। দলীয় রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকার কারণেই এ অধঃপতন। দলীয় রাজনীতি থেকে তাদের বিযুক্ত না করলে নিরাময় অসম্ভব। ইদানীং সেনাবাহিনীর অফিসারগণ উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করতে ব্যাপক আগ্রহ প্রকাশ করছে। উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণা ছাড়া দেশকে উন্নত করা সম্ভব নয়। এই উপলব্ধি সেনাঅফিসারদের মধ্যেও আছে। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতায়নে তারা অনীহা প্রকাশ করতে নাও পারে। তারা আগ্রহ প্রকাশ করলে একাডেমিয়া দেশের গুণগত পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বেসামরিক আমলারা ও এখন পিএইচডি ডিগ্রীর বিষয়ে বেশি আগ্রহী। কাজেই তাদের মধ্যেও বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারে ব্যাপক আগ্রহ বিদ্যমান।সংস্কারটা কিভাবে করলে রাজনীতিতে ভাল এবং মেধাবীগণ আকৃষ্ট হবে সেটাই এখন ভাবনার বিষয়। এছাড়া উন্নতদেশগুলোতেও ছাত্র শিক্ষকগণ চিন্তাচেতনার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। পৃথিবীতে এর ভুরি ভুরি দৃষ্টান্ত মিলবে। ছাত্ররাই আগামী বাংলাদেশের রূপকার। দেশের উন্নয়নে তাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করাটা খুবই জরুরি। ছাত্ররাজনীতিকে ছাত্র স্বার্থের মধ্যে সীমিত রাখাই অধিকতর সমীচীন। যেমন জব গ্যারান্টিযুক্ত শিক্ষানীতি চাই, শিক্ষিত বেকার ভাতা চাই, কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা চাই, বিনামূল্যে চিকিৎসা চাই, ট্রেন এবং বাসে হাফ ফেয়ার চাই ইত্যাদি দাবী নিয়ে রাজনীতি।এসব দাবী দাওয়া আদায় করার আন্দোলন করতে করতেই তারা রাজনীতিবিদ হতে পারে ।দলবাজি করতে দিলে ছাত্রদের সন্ত্রাসে আসক্ত হওয়ার সুযোগ ও আশংকা থেকে যায়। সেক্ষেত্রে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, গুন্ডামি এবং মাস্তানি ছাড়া আর কিছু শেখার সম্ভাবনা খুব কম। দলীয় ছাত্র রাজনীতির বেনেফিসিয়ারি মাত্র তিনটিদল।দলীয় রাজনীতির জন্য ডাকসু এবং রাকসু নির্বাচন হচ্ছে না। সাধারণ শিক্ষক এবং ছাত্রসমাজ দলীয় ছাত্র রাজনীতি চায় না। অভিভাবকবৃন্দও চায় না।এজন্য কর্তৃপক্ষ ভোটের কোনো আয়োজন করে না। দেশ এবং জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হলে ছাত্রদের বিবেক মারা যায়।ছাত্ররাও ছাত্র স্বার্থে রাজনীতি চায় । শিক্ষকরাও শিক্ষক স্বার্থে রাজনীতি চায় । কৃষকরাও কৃষক স্বার্থে রাজনীতি চায় । শ্রমিকরাও শ্রমিক স্বার্থে রাজনীতি চায় । তারাও তাদের ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচন করতে পারে না। পেশাভিত্তিক স্বার্থ আদায়ের জন্য পেশাজীবী রাজনীতি আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। নির্বাচনের মাধ্যমে উচ্চকক্ষে তারা নির্দলীয় নীতিনির্ধারকের আসন অলংকৃত করতে পারে। কোনো দলের লেজুড় বৃত্তি করে পেশাজীবীদের লাভবান হবার কোনো নজির নেই। এটা করা হলে শোডাউনের রাজনীতির গতি মন্থর হবে।রাজনীতিতে পেশীশক্তি প্রয়োগের ঘটনা কমবে।রাজনীতি হবে যুক্তিসংগত দাবিদাওয়া ভিত্তিক। এগুলো নিষ্পত্তি হবে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে।দলীয় রাজনীতির কারণে পেশাজীবীরা তাদের ন্যায্য পেশাগত দাবিদাওয়া আদায় এবং উপস্থাপনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এতে কিছু নেতা আলাদাভাবে লাভবান হয়। পেশাজীবীরা এখান থেকে কিছুই পায়না। দলীয় প্রভাব বলয় ভারী করার জন্য কিছু রাজনীতিক বিভিন্ন পেশার মধ্যে তাদের নোংরা রাজনীতি ঢুকাতে চায়। পেশাজীবীদের ব্যবহার করে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হতে চায়। ধান্দাবাজি করতে চায়। দেশে ও বিদেশে সম্পদের পাহাড় রচনা করতে চায়। তাদের দুর্নীতি করার বুকের পাটা অনেক বড় । কোনোকিছুকে তারা পরোয়া করেনা। তাদের চোখে মুখে ডেস্পারেট ভাবসাব। কাজেই তাদের ভাল পথে নিয়ে আসা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। স্বাধীনতার আগে ছাত্র রাজনীতি দলীয় বৃত্তের মধ্যে আবদ্ধ ছিলনা। ছাত্র রাজনীতিতে দলীয় ব্রাকেটের রাজনীতির সূচনা হল স্বাধীনতার পর। তথাপি স্বাধীনতার পর ছাত্র রাজনীতি ছিল মূলতঃ সরকার বিরোধী রাজনীতি । ৯১ সনের পর ছাত্র রাজনীতি মানে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতি। ছাত্র রাজনীতি সরকার বিরোধী রাজনীতির মিছিল থেকে হারিয়ে গেল। ছাত্র রাজনীতি জনগণের বিপরীতে অবস্থান নিল। সরকারের অনেক বাহিনীর সাথে এটাও আরেক বাহিনী হিসেবে যুক্ত হল। ছাত্র রাজনীতির গুণ গত পরিবর্তন আনতে হলে দলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে ছাত্র রাজনীতিকে বের করে আনতে হবে। শিক্ষাঙ্গনকে দলীয় রাজনীতিমুক্ত না করতে পারলে দেশে সত্যিকার শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। বাংলাদেশকে সন্ত্রাসের মুল্লুক থেকে জ্ঞানের মুল্লুকে নিয়ে আসার জন্য নতুন করে একাডেমিয়াকে সাজাতে হবে। মেধাবীদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলো অর্পণ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হবে মেধাতন্ত্রের অভিভাবক।মানবাধিকার আদালতগুলো মেরিট কোর্ট হিসেবে কাজ করতে পারে। সন্ত্রাসের রাজত্ব থেকে মেধাবীদের রাজত্ব কায়েম করা চাট্টিখানা কথা নয়। এ ক্ষেত্রে অনেক প্রস্তুতি দরকার। মেধাবীদের চমৎকার নেটওয়ার্ক গঠন ছাড়া যা সম্ভব নয়। দেশের ভিতর সেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক মেধাবীদের খুঁজে বের করা একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। সবদেশেই এমন সৎ এবং মেধাবী লোক অনেক আছে যাঁদের খোঁজ খবর কেউ রাখেনা। অথচ এরা দেশের ক্রান্তিকালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সেই সক্ষমতা তাদের আছে। দরকার শুধু একটু খোঁজখবর নেয়া। একাডেমিয়ার পেট থেকে গড়ে ওঠবে একটি অনুসন্ধানী মিডিয়া। জনমত গঠনে অনুসন্ধানী মিডিয়ার কোনো বিকল্প নেই। আমলাতন্ত্র, একাডেমিয়া এবংঅনুসন্ধানী মিডিয়া সমন্বয় করে কাজ করলে দেশে অসাধ্য সাধন কোনো ব্যাপার নয়। প্রয়োজন স্বার্থান্বেষী মহলের বৃত্ত থেকে জনগণকে উদ্ধার করা। একটি সমন্বিত প্রয়াস ছাড়া যা কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। নীতিনির্ধারকদের একাডেমিয়ার গুরুত্বটা খুব যত্ন করে বুঝাতে হবে। গ্রাজুয়েট জনসংখ্যার মাষ্টারপ্ল্যান প্রস্তুত করবে এই একাডেমিয়া এবং তা জাতীয় পরিকল্পনা কমিশনে পেশ করবে। পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করতে হবে মানবসম্পদউন্নয়নে। বেকার উৎপাদনকারী কোনো শিক্ষাব্যবস্থা কোনোক্রমেই টেকসই হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মাথা থেকে বেকার উৎপাদনের ধারণাটি ভেংগে ফেলতে হবে। পরিকল্পনা প্রণয়নে ছাত্র শিক্ষকগণ নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত থাকবে। রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে তাদের থাকবে অবাধ বিচরণ। তাদেরকে আগের মত আর অবহেলা করা সংগত হবে না। কৃষক ও শ্রমিকদের ক্ষেত্রে ও সমান আচরণ কাম্য । কৃষক শ্রমিক এবং ছাত্রদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে কিসের রাজনীতি ? সংবিধানে সমাজতন্ত্রকে মূলনীতি হিসেবে বহাল রেখে কোনো দলের জন্যই ধনী তোষণ রাজনীতির চর্চা অব্যাহত রাখা আর সমীচীন নয়।গরীবদের জন্য মৌখিক সহানুভূতি প্রকাশ করে কৌশলে ধনীদের স্বার্থে কাজ করা জনগণের সাথে এক ধরণের প্রতারণার সামিল। এজন্য গণমাধ্যমের উচিৎ কাল্পনিক ইশতেহার প্রণয়নে জনমত আহবান করা। দেশের কোন সমস্যা কোন দল কিভাবে সমাধান করবে তার দ্ব্যর্থহীন মাষ্টার প্ল্যান বা রূপরেখা ভোটের আগেই জনসমক্ষে প্রকাশ করতে দলগুলোকে উজ্জীবিত করা। জনগণের সমস্যা সমাধানে কোন দলের সক্ষমতা এবং আন্তরিকতা কতটুকু তা ইশতেহার পড়ে জনগণ যেনো খুব সহজে বুঝতে পারে। গণমাধ্যম এটা করতে পারলে রাজনীতিতে সুস্থ প্রতিযোগিতা বাড়বে।ইশতেহারে থাকবে গ্রাজুয়েট জনসংখ্যা, শ্রমিক এবং কৃষকের কর্মসংস্থান পরিকল্পনা, সঠিক ধনীশুমারি এবং তাদের ট্যাক্সনেট ভূক্তি, খেলাপী ঋণ শুন্যে নামিয়ে আনা, পাচারকৃত টাকা দেশে ফিরিয়ে আনা, কর্মসংস্থানের জন্য কালো টাকাকে অর্থনীতির মূলস্রোতে নিয়ে এনে শিল্পকারখানা স্থাপন, ধনী গরীবেরআয় বৈষম্য কমিয়ে আনা, কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্যের গ্যারান্টি ইত্যাদি বিষয়। ইশতেহারে জনগণকে আয় বৈষম্যটা ভাল করে বুঝানো যায়। অবশ্য এটা মানুষ বাস্তবেও হাড়ে হাড়ে টের পায়।দারিদ্র্য উৎপাদন এবং ধনী সৃষ্টির পলিসিগুলো সনাক্ত করে তা থেকে বিরত থাকার পলিসি অবলম্বন করা যায়। ধনিক শ্রেণী সৃষ্টি ছাড়া দুর্নীতি এবং লুটপাট সম্ভবনয়।আবার দারিদ্র্য বিমোচন করে গরীবের বন্ধু না সাজতে পারলে জনপ্রিয় হওয়া যায় না। এজন্য রাজনীতির জন্য দুটোই লাগে। ভাল পলিসি তৈরী করে জনপ্রিয় হওয়া খুবই কঠিন।এ কারণে অনেকে রাজনীতিতে সস্তা জনপ্রিয়তার রুট খুঁজে। ভুল জ্ঞান, ভুল তথ্য এবং ভুল গবেষণা দিয়ে জনগণের ব্রেনওয়াশ এবং আইওয়াশ করা সম্ভব। এগুলো দিয়ে জনগণকে তালকানা করা য়ায় এবং সুযোগ পেলে দলগুলো তা করে। রাজনীতিতে গরু মেরে জুতাদান পলিসি বহুল ব্যবহৃত। গরু মারাটা জনগণ দ্যাখে না। কিন্তু আনুষ্ঠানিক জুতাদান উপভোগ করে। গরু মারার সময় সাংবাদিক বা ক্যামেরা থাকে না ।কিন্তু জুতা দান ইভেণ্ট কাভার করার জন্য থাকে অনেক সাংবাদিক।
নাগরিককে সর্বদা সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করার সুযোগ দিতে হয়। না দিলে সরকার নিজের ভুল সংশোধনকরে অধিক জনপ্রিয় হবার সুযোগ হারায়। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পেশাজীবীদের নির্দলীয় এবং নিরপেক্ষ থাকতে হবে। তাদের নির্দলীয় এবং নিরপেক্ষ রাখতে হলে সরকারের গঠনে সাংবিধানিক কমিশনের সংখ্যা কিছুটা বাড়ানো যেতে পারে।সাংবিধানিক কমিশনে নিয়োগের প্রক্রিয়াটি সংবিধানেই লিপিবদ্ধ রাখা এবং তাতে দলের কোনো হাত না রাখাই সমীচীন। সরকার হবে দলীয় এবং নির্দলীয় ব্যক্তিবর্গের সুষম মিশ্রণ। পার্লামেণ্ট, কেবিনেট এবং মন্ত্রণালয়গুলো হবে দলীয় এবং সাংবিধানিক কমিশনগুলো হবে নির্দলীয়। সকল সরকারী নিয়োগ ও পদোন্নতি পাবলিক সার্ভিস কমিশনে ন্যস্ত করা সমীচীন। বর্তমান বাস্তবতায় কোনো সাংবিধানিক কমিশন পুরোপুরি স্বাধীন নয়। কারণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসহ সকল সরকারী কর্মচারীদের নিয়োগ পদোন্নতি গুলোদলীয় সরকার দেয়।কাজেই নিজের ক্যারিয়ার ধবংস করে কোনো সরকারী কর্মচারী সরকারের ইচ্ছার বিপরীতে কাজ করবেনা। কোনো দলীয় সরকার কখনো দলীয় বৃত্তের বাইরে যাবে না।দলীয় সরকারের সকল নিয়োগ ও পদোন্নতি দলীয় হবে এটাই স্বাভাবিক। দলীয় সরকারের কাছ থেকে নির্দলীয় এবং নিরপেক্ষ আচরণের নজির নেই বললেই চলে।দলের অস্তিত্বের স্বার্থে এবং কৌশলগত কারণে দলীয় সরকারগুলো কখনো তা করে না। এরূপ প্রত্যাশাও সংগত নয়। কাজেই সাংবিধানিক কাঠামোর পরিবর্তন ছাড়া নির্দলীয়তা এবং নিরপেক্ষতা পাওয়ার কোনো আশা নেই।এখানে জিতবার যেমন সম্ভাবনা আছে হারবারও তেমন আশংকা আছে। বিদ্যমান সংবিধানে জয় মানে বেহেস্তের নাজ নেয়ামত এবং পরাজয় মানে জাহান্নামের আজাব ও গজব। কাজেই আজাবে থাকতে এবং নতুন করে আজাব বেছে নেয়ারআত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে স্বজ্ঞানে এবং স্বেচ্ছায় কোনো দল রাজি হবে না।এমতাবস্থায় শুরু হবে রাজপথে যুদ্ধ। বলির পাঁঠা হিসেবে ঘটবে কর্মীদের প্রাণহানি।এতে পেশীশক্তির জয় হবে এবং জ্ঞান শক্তি হেরে যাবে। জ্ঞান শক্তি যাতে না হারে এবং সকল দলের শান্তি পূর্ণ সহাবস্থান ও সুরক্ষা যাতে নিশ্চিত হয় তার জন্য কমিশনগুলো কাজ করতে পারে।
বর্তমান সংবিধান ক্ষমতাসীন দলের জন্য আনন্দদায়ক এবং বিরোধীদলের জন্য বেদনাদায়ক । বিরোধী রাজনীতিকে কোনো স্পেস দিতে হলে সাংবিধানিক কমিশনগুলোকে নির্দলীয় এবং নিরপেক্ষ করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। কোনো কৌশলে ক্ষমতাসীন দলের যদি চিরদিন ক্ষমতাসীন থাকার প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস থাকে তাহলে বিদ্যমান সংবিধান সংশোধন করার আর কোনো প্রয়োজন নেই। আর যদি না থাকে কিংবা বিরোধী দলে যাওয়ার বিন্দুমাত্র আশংকা থাকে তাহলে সরকার মৌলিক কাঠামো ঠিক রেখে সর্বদলীয় সমঝোতার ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচনদিতে পারে। এজন্য সরকার সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করে সব দলের সাথে সমঝোতা সংলাপের সূচনা করতে পারে। সংবিধানে দলীয় এবং নির্দলীয় ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দলীয় রাজনীতিমুক্ত করতে পারে।সকল পেশাজীবীকে দলীয় রাজনীতি মুক্ত করতে পারে । পেশাজীবীদের রাজনীতিকে পেশাগত দাবীদাওয়া আদায়ের মধ্যে সীমিত রাখতে পারে। অথবা সংবিধান সংশোধন করে কিছু কালের জন্য সর্বদলীয়সরকার গঠন পূর্বক বৃহত্তর সমঝোতার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে। এটা দীর্ঘ মেয়াদে সকল রাজনৈতিক দল এবং রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলজনক হবে।