সক্ষমতার এই গর্ব সীমাহীন

সক্ষমতার এই গর্ব সীমাহীন

নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু বানিয়ে বিশ্বকে চমকে দিয়েছে বাংলাদেশ। নানা বাধাকে অতিক্রম করে উন্নয়নের অন্যতম মাইলফলক এই পদ্মা সেতু। উত্তাল পদ্মার ওপর নির্মিত হলো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের সংযোগ। এর মাধ্যমে দেশের সক্ষমতার প্রমাণের পাশাপাশি দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার ইতিবাচক অগ্রযাত্রার সূচনা হলো।
৬.১৫ কিলোমিটার এই সেতু বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু। দীর্ঘ ১২ কিলোমিটার নদী শাসন এবং দুইপাড়ে ১৪ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের মাধ্যমে সেতুর পুরো কর্মযজ্ঞ শেষ হয়েছে। দ্বিতলবিশিষ্ট এই সেতুতে উপরে যানচলাচল করবে আর নীচে থাকবে রেলপথ। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের সুবিধা বাড়াতে সেতু দিয়ে ওই অঞ্চলে যাবে গ্যাস এবং ফাইবার অপটিকের লাইন।

পদ্মা সেতুর মূল কাজের নির্মাণ শুরু ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর। ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে শেষ হওয়ার কথা ছিল চার বছরে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হতে প্রায় সাড়ে সাত বছর লেগেছে। সেতু প্রকল্পের সবচেয়ে বড় কারিগরি জটিলতা মোকাবিলা করতে হয়েছে পাইলিংয়ে। পরিকল্পনামতো পাইল বসাতে গিয়ে দেখা যায়, নদীর নিচে নরম মাটি। ফলে কাজ বন্ধ করতে হয়েছিল। পাইল বসাতে গিয়ে আধুনিক হ্যামার বা হাতুড়ি ভেঙে গিয়ে কাজ বন্ধ হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ভরা বর্ষায় নদীর পানির স্রোতের বেগ থাকে সেকেন্ডে ৪ দশমিক ৬ মিটার পর্যন্ত। এমন স্রোতে নদীশাসনের কাজ ব্যাহত হয়। সেতুর পিলারের ওপর ক্রেন দিয়ে ৩ হাজার ২০০ টন ওজনের স্টিল বা ইস্পাতের স্প্যান বসানো হয়েছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ কাজ করেছেন। এর মধ্যে চীনের ৭০০ এবং বাংলাদেশের প্রায় ৪ হাজার মানুষ কাজ করেছেন। ১৬০টির মতো স্থানীয় সহযোগী ঠিকাদার হিসেবে বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ করেছে। করোনা মহামারির কারণে দুই বছর পুরোপুরি বিধিনিষেধে থাকতে হয়। মহামারির সময় প্রকল্প এলাকায় এয়ার বাবল তৈরি করে কাজ করতে হয়েছে। এতোকিছুর পরে স্বপ্নের সেতু এখন গর্বের বাস্তব।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু বিষয়ে বলেছেন, ‘সব ষড়যন্ত্র-প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। মানুষের শক্তিতে আমি সব সময় বিশ্বাস করি। তারা পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বলেই পদ্মা সেতু মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।’ আর তার হাতেই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে এই বহুল কাঙ্খিত সেতুর। পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়ার পরে নানা সঙ্কট-অবিশ্বাসের তীর বিদ্ধ করেছিল দেশের সক্ষমতাকে, কিন্তু নিজেদের অর্থায়নে সেতু হবার পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ প্রশংসায় ভাসাচ্ছে বাংলাদেশকে। সক্ষমতার এই গর্ব সীমাহীন, এ অর্জনও অতুলনীয়। এই ধারা অব্যাহত রেখে দেশ এগিয়ে যাক, এই আমাদের প্রত্যাশা।

Share This Post