বাংলাদেশে আইনের শাসন এবং আইন প্রণয়ন সংস্কৃতি – সমস্যা এবং সম্ভাবনা

মুঃ আবদুল হাকিম :
ব্যক্তির শাসনে ব্যক্তি ভালো হলে সুশাসন আসে এবং ব্যক্তি খারাপ হলে দুঃশাসন আসে। রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনায় সৎ এবং যোগ্য লোকের শাসন এবং আইনের শাসন এ দুটো তরীকায় বহুল আলোচিত। অনেকে সৎ ও যোগ্য লোকের সাথে ঈশ্বরের আইনকেও যুক্ত করতে চান । তাদের মতে মানুষ এত খারাপ যে তাদের আইন দিয়ে সুশাসন আশা করা যায় না। এজন্য আদিকাল থেকে ব্যক্তি মানুষকে ইশ্বরের ভয় দেখানো হচ্ছে ভাল হওয়ার জন্য। স্বর্গ, নরক, কর্মফল, যমদূত ইত্যাদির ভয় দেখিয়ে তার নৈতিক শিক্ষা মজবুত করা হচ্ছে। সর্বত্র প্রচারিত হচ্ছে নৈতিকতার জয়গান। গোর আজাবের কথা , পুলসিরাতের কথা এবং হাশরের মাঠের ভয়াবহ চালচিত্রের কথা বলা হচ্ছে। অর্থাৎ ব্যক্তি সংস্কারে সমাজের আগ্রহ এবং মনোযোগ প্রচুর।এতদসত্বেও ব্যক্তির নৈতিক চরিত্র সবসময় অটুট রাখা অতীতেও সম্ভব হয় নি এবং বর্তমানেও সম্ভব হচ্ছে না। ভবিষ্যতে সম্ভব হবে এমন বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কোনো কারণ নেই। খারাপ এবং ধনী মানুষেরা যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়ে বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করছে। অল্প কিছু মানুষ কিভাবে কিভাবে ধর্ম ও শিক্ষার নৈতিক অনুমোদনে সব মানুষের সকল সম্পদ হাতিয়ে নিয়ে নিজের পকেটে কৌশলে ঢুকিয়ে নিচ্ছে।পৃথিবীর নব্বই ভাগ মানুষের এ নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই। এমতাবস্থায় ভোগবাদী সভ্যতায় নৈতিক চরিত্রের ভংগুরতা প্রতিরোধ অসম্ভব। রিপুর কাছে অনেক সময় আমরা হেরে যায়, হেরে যেতে হয় এবং দিন শেষে মানুষ হেরে যায়। হয়তোবা হেরে যাওয়ার জন্য ধরাধামে এ মানব জন্ম। ইবলিশের অট্টহাসি থামানোর সাধ্য কার! অর্থাৎ নৈতিক পদস্খলন অনিবার্য। জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা না থাকলে সকালের সৎ মানুষটি বিকেলে অসৎ হয়ে যেতে পারে। আবার জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা থাকলে সকালের অসৎ মানুষটি ধরা পড়ার আশংকায় বিকেলে সৎ হয়ে যেতে পারে। এ অমোঘ সত্যটি মাথায় নিয়ে আইন প্রণয়নে হাত দিতে হবে।আইনের শাসনে ব্যক্তির ভালোমন্দে কোনো যায় আসেনা এবং এ নিয়ে গবেষণা করে কোনো লাভ নেই। আমাদেরকে অবশ্যই অনুধাবন করতে হবে এ পদে পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ লোকটি এলে ঘটনার পরিণতি কেমনতর হতে পারে। আইনের শাসনে সিস্টেম অনুযায়ী সকল কাজ হয়।কেননা জ্ঞান, গবেষণা, মেধা এবং প্রজ্ঞা দিয়ে সিস্টেমটা তৈরী করা হয়।ব্যক্তির শাসনে যারা বিশ্বাসী তারা ব্যক্তি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে সমাজ বদলাতে চায়।এরা বারবার প্রতারিত হয় এবং হতাশ হয়।আইনের শাসনে যারা বিশ্বাসী তারা আইন এবং পলিসি পরিবর্তন করে সমাজ বদলাতে চায়। এজন্য ই তো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সার্বক্ষণিকভাবে রাষ্ট্র ও সমাজবিজ্ঞান চর্চা হয় । তা নাহলে এসব জ্ঞান চর্চা মূল্যহীন এবং সময়ের অপচয়মাত্র।কোনো মানুষ ফেরেস্তা নয় আবার ইবলিশও নয় এ সত্য মাথায় রেখে আইন বা পলিসি তৈরী করা হয়। এ কারণে জন্ম হয়েছে সমাজ ও রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের।ব্যক্তির সদিচ্ছার কাছে সমাজকে ছেড়ে দিয়ে আইনের শাসন কায়েম করা যায় না বা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণ করা যায় না। সুখী দেশের তালিকায় পশ্চিমা বিশ্বের যে দশটি দেশ সেখানে আইনের শাসন বিদ্যমান। তথাপি আইনের শাসনের সাফল্য নিয়ে আমাদের এত দ্বিধা কেন ? কেন আমরা হন্য হয়ে বিকল্প পথ খুঁজছি ?আমাদের সংবিধানের মূলনীতিমালায় থাকা সত্বেও কেন আমরা তা কার্যকর করছিনা ?
অনেকে খুব গভীরভাবে চিন্তা না করে দেশে ইশ্বরের আইন এবং সৎলোকের শাসন না থাকার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন। পাপী এবং গুনাহগার মানুষের জ্ঞানের প্রতি এদের কোনো আস্থা নেই। মানুষের তৈরী আইনের শাসন তারা চায়না। তারা চায় ইশ্বরের তৈরী আইনের শাসন। এগুলো শুনতে ভাল লাগলেও এতে যে সমাজের অগণতান্ত্রিক ক্ষমতায়নের গন্ধ আছে তা অনুধাবনে অনেকে অক্ষম। মুশকিল হল ইশ্বরতো অদৃশ্য। যেহেতু বাস্তবে সংসদে ইশ্বরকে আনা সম্ভব নয় সেহেতু ইশ্বরের নামে আনা হবে মোল্যা বা পুরোহিতদের মতামত এবং ব্যাখ্যাকে। পৃথিবীতে ইশ্বর দৃশ্যমান হলে নিঃসন্দেহে কোনো সমস্যা থাকতো না। কিন্ত তাতো হবার নয় এবং এখান থেকে বিপত্তি শুরু। যা দেখা যাবে না এবং বুঝা যাবে না সে সম্পর্কে আলেম সমাজ এবং পুরোহিত সম্প্রদায়ের ব্যাখ্যা অথবা অপব্যাখ্যা যাই আসুক মানুষকে মেনে নিতে হবে। কারণ দেখা বা যাচাই করার কোনো সুযোগ এখানে নেই। সেক্ষেত্রে আলেমতন্ত্র বা পুরোহিততন্ত্রের আশংকাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া যায় না। অন্যদিক থেকে দেখলে মানুষ ইশ্বরের প্রতিনিধি বা খলিফা। তাহলে এমপি মহোদয়গণ হচ্ছে ইশ্বরের প্রতিনিধির প্রতিনিধি। তা হলে তো ঈশ্বরের আইন, খেলাফত এবং গণতন্ত্র একাকার হয়ে যায়। এক শ্রেণির আলেমের কাছে সুদের মত গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রও হারাম। অথচ পবিত্র কোরান মজীদের কোথাও গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রকে সরাসরি হারাম বলা হয়নি আবার হালালও বলা হয়নি। বরং ধর্ম গ্রন্থ গুলোতে আকারে ঈংগিতে সাম্যবাদ এবং গণতন্ত্রের কথা বলাহলেও পুঁজিবাদের অনুমোদনের ঈংগিত কোথাও পাওয়া যায়নি।অথচ মুসলিম বিশ্বে পুঁজিবাদ অবাধে চলছে। ধর্মকে ব্যবহার করে পুঁজিবাদ সফলভাবে সমাজতন্ত্র এবং গণতন্ত্রকে মোকাবিলা করছে।বলা হচ্ছে এগুলোদেশী ইজম নয় বিদেশী ইজম। অথচ পৃথিবীর ১০% সম্পদ ৯০% লোকের হাতে এবং ৯০% সম্পদ ১০% লোকের হাতে। পৃথিবীর প্রায় সকল ধর্মএ অর্থনৈতিক এবং সামাজিক বৈষম্যকে তকদির বা অমোঘ নিয়তি বলে প্রচার করছে এবং মেনে নেয়ার জন্য নসিহত করছে। হালাল উপায়ে ধনী হওয়া যায় না। পুঁজিবাদ মেনে নিলে আমাদের হারাম রিজিক মেনে নিতে হয় এবং হারাম রিজিক খেলে বা হারাম রিজিকে বসবাস করলে আমাদের ইবাদত বন্দেগী কিছুই কবুল হবার কথা নয়। সুদ হারাম হলে টাকার টাইম ভ্যালু এবং মুদ্রাস্ফীতি সমন্বয় হবে কিভাবে? যে টাকা আমি ধার নিবো বেশি না হলেও অন্ততঃ সেই টাকাতো আমাকে ফেরত দিতেই হবে ।তা না হলে দাতার প্রতি অবিচার করা হবে ।সুদ ছাড়া প্রাইভেট ব্যাংকিং এর বিকল্প কোনো পথ নেই। সুদ ছাড়া লেন দেন করতে হলে সমগ্র ব্যাংকিংকে জাতীয়করণ করে ব্যাংকারদের বেতন সরকারী কোষাগার থেকে দিতে হবে যা হিতে বিপরীতও হতে পারে।
আইনের শাসন মানে জ্ঞানেরও শাসন। এ জ্ঞানভিত্তিক সমাজ আসে সমাজবিজ্ঞানীদের সমবেত গবেষণা এবং প্রজ্ঞা থেকে।এজন্য দরকার পেশাদার সমাজবিজ্ঞানী কাউন্সিল যাদের সাথে সাংসদদের কানেক্টিভিটি থাকবে।এমপি মহোদয়দের ক্যারিয়ারের জন্য একটা এলএলবি ডিগ্রীর প্রয়োজন আছে। অধিকাংশ মানুষের ধারণা সকল আইন এবং নীতি খুব চমৎকার। বাস্তবায়নের সাথে জড়িত লোকজন ভাল নয় বলে জনগণের ভোগান্তি হয়। এ কারণে সমাজে আইন এবং নীতি সংস্কারের কোনো তাগিদ বা গরজ কেউ অনুভব করেনা। সব আইন যদি ভালই হয় তাহলে সমাজে অল্পকিছু মানুষের
হাতে নব্বই ভাগ অর্থ যায় কিভাবে? ৭৪ বছর ধরে এত দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং অপরাধের জন্ম হয় কোত্থেকে ?ওয়েস্টমিনিস্টার ডেমোক্রেটিক মডেলে ক্ষমতার পৃথকীকরণ এবং ভারসাম্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু যা চীন বা রাশিয়ার কমিউনিস্ট মডেল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।যুক্তরাজ্যে অনেক সময় নিয়ে আইন তৈরী করা হয়। নাগরিক, সিভিল সোসাইটি এবং স্টেকহোল্ডার এনগেজমেন্ট জোরদার করার জন্য সেদেশে প্রথমে গ্রীন পেপার এবং পরে হোয়াইট পেপার ইস্যু করা হয়। বিল পেশ করার আগে হাউজ অফ কমন্স এবং হাউজ অফ লর্ডস এর সদস্যদের সমন্বয়ে জয়েন্ট কমিটি গঠন করা হয়। এতে জনমত যাচাই এর কাজটি বিল পেশ করার আগেই সম্পন্ন হয়ে যায়। এতে সমাজবিজ্ঞানীরাও ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করে।আইন এবং নীতিসংস্কার না করে কোনোদিন সমাজ সংস্কার করা যায় না।
সংবিধানের প্রস্তাবনায় রাষ্ট্র পরিচালনার চারটি মূলনীতিসহ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা এবং সুবিচারের কথা।অর্থাৎ ন্যায়ভিত্তিক সমাজ নির্মাণের কথা।সংবিধানের প্রথম ,দ্বিতীয় এবং তৃতীয়ভাগে বর্ণিত নাগরিক অধিকারগুলোকে আইনএবংনীতির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার কথা। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন বাদ দিয়ে বর্তমান আধুনিক সভ্যতা কে কল্পনা করা যায় না।
সমাজ ও জীবন ক্রমশ জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। জীবন ও সমাজের জটিল কাঠামো থেকে জন্ম নিয়েছে অজস্র পরস্পরবিরোধী স্বার্থান্বেষী গ্রুপ। স্বার্থান্বেষণের এই জটিল চক্র থেকে জনস্বার্থ খুঁজে বের করা খুবই কঠিন কাজ। আজকের পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ হল স্বার্থান্বেষী মহলের বিপরীতে গিয়ে জনস্বার্থে সুষম আইন তৈরী করা।মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবংমুক্তবুদ্ধিজীবীত্ব ছাড়া যা কোনোমতেই সম্ভব নয়। এ জন্য প্রতিটি দেশে এই কাজটি করে সে দেশের সমগ্র জনগণ। পৃথিবীর আর কোন কাজে দেশের সমগ্র জনগণ অংশগ্রহণ করে না।অংশগ্রহণের মাত্রা বেশি হলে আইন ভাল হয়।ইউরোপ আমেরিকার তুলনায় এক্ষেত্রে আমাদের এমপি মহোদয়দের অংশগ্রহণ খুবই কম। বিচার প্রশাসন নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তবে তা আইন প্রণয়নের মত গুরুত্বপূর্ণ কাজ নয়। বিচার ও প্রশাসন আইন নির্ভর একটি প্রক্রিয়া। আইন প্রণয়নের নির্ভুলতার ওপর বিচার প্রশাসনের ত্রুটিমুক্ততা নির্ভরশীল। এইজন্য আইন প্রণয়নে জনগণের প্রতিনিধিত্ব আবশ্যক। বিচার প্রশাসনেও জনগণের প্রতিনিধিত্ব আবশ্যক না হলেও থাকা ভাল। জনগণের প্রতিনিধিত্ব স্বরূপ একটা জুরিবোর্ড আগে ছিল যা এখননেই।
আজকের পৃথিবীতে কোন দেশের অধিকাংশ মানুষকে কোন প্রক্রিয়ায় সৎ বানানো সম্ভব নয় ।কারণ আজকের পৃথিবীতে প্রলোভন, ভোগ বিলাসের উপকরণ প্রচুর, চারিদিকে জাগতিক সুখ সম্ভারের বিপুল বিশাল ছড়াছড়ি । আগে মানুষ এক কোটি টাকা কিভাবে খরচ করবে তা ভাবতেই পারতো না। আধুনিক পৃথিবীতে মানুষ ইচ্ছে করলেই প্রতিদিন এক বিলিয়ন ডলার খরচ করতে পারে। তাই আজ মানুষের টাকা বানানো এবং সম্ভোগের নেশা অপ্রতিরোধ্য।
আদি যুগে ধর্ম ভয় মানুষের মনে বদ্ধমূল ছিল এবং তা মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করত। আজকে ধর্ম বা কোন ভয় কৃত্রিমভাবে মানুষের মনে সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। ধর্মের সাথে জড়িয়ে আছে অদৃশ্য ঈশ্বরের অস্তিত্ব। ঈশ্বর পৃথিবীতে কোন দিন দৃশ্যমান হবে না। এইজন্য তাঁর শক্তি বা অস্তিত্ব যতই বিশাল হোক না কেন মানুষের মনে প্রবল ভীতির সঞ্চার করে তা সমাজ ও রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। সমাজ ও রাষ্ট্রকে এখন নিয়ন্ত্রণ করবে সিস্টেম। আর আইন হচ্ছে সুপ্রিম সিস্টেম মেকার। আইন সমাজের কাঠামো এবং উপরি কাঠামো তৈরি করে। সামাজিক বিভিন্ন প্রেসার গ্রুপকে ক্ষমতায়ন করে অথবা তাদের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে। বিদ্যমান অর্থ পুনর্বণ্টন করে। সমাজ ও জীবনের সুখ, শান্তি, স্বস্তি ও নিরাপত্তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। আইন ধনীকে গরীব এবং গরীবকে ধনী বানায়, মানুষকে কাঁদায়, হাসায়, অলস বানায়, কর্মঠ বানায়, শেখায় অথবা মূর্খ রাখে। মানুষকে সক্রিয় করে অথবা নিষ্ক্রিয় করে। আইন দিয়ে সমাজ ও মানব জীবনের সবকিছু স্পর্শ করা সম্ভব। যেখানে আইনের শাসন চলে সেখানে আইন হচ্ছে সর্বোচ্চ মূল্যবোধ। সামাজিক ডিসিপ্লিন সংরক্ষণের একমাত্র হাতিয়ার আইন। আধুনিক সুশৃংখল সমাজের একমাত্র নিয়ামক হচ্ছে আইন। যেহেতু রাষ্ট্রের সমস্ত মানুষের সবকিছুকে আইন স্পর্শ করে সেহেতু আইন শুধু আইনজ্ঞদের হাতে ছেড়ে দিলে চলবে না। আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া রেডিও, টেলিভিশন এবং পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জাগ্রত জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে যাতে জনগণ তাতে সক্রিয় ভাবে অংশ নিতে পারে এবং আইনটি জনস্বার্থে না গোষ্ঠীস্বার্থে প্রণীত এ ব্যাপারে ভাবতে পারে।
গণতন্ত্রে গোষ্ঠীস্বার্থে আইন প্রণয়ন করা খুবই স্বাভাবিক। কারণ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী তাদের স্বার্থ উদ্ধারে যতটা সক্রিয় থাকে সেই তুলনায় নিরব জনতা সক্রিয় থাকে না।স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী স্বার্থ উদ্ধারের জন্য প্রচার মাধ্যমে ভূমিকা নিতে উদ্যোগী হয় এবং সরব হয়।প্রয়োজনে সরকারকে চাপ সৃষ্টি করে শহরাঞ্চলে সভা ও মিছিল করে তুলকালাম কাণ্ড ঘটায়। নিরব জনতার অধিকাংশ গ্রামে বাস করে। ফলে গ্রামের লোকের সরব হবার সুযোগ নেই। সুবিধাবাদী ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী শহরকেন্দ্রিক হয় এবং স্বার্থরক্ষার জন্য তারা কখনো ঘুমায় না।আবার আইন প্রণয়নের দাপ্তরিক কাজ গুলো শহরে সম্পাদিত হয়। এইজন্য যে টেবিলে এ কাজটি শুরু হয় সেখানে তারা ধর্ণা দেয়।
আইন কমিশনের কার্যক্রমের সাথে এমপি মহোদয়দের বুদ্ধিবৃত্তিক যোগাযোগটা আরো নিবিড় এবং নিয়মিত হওয়া দরকার। এর সাথে সম্পৃক্ত করা দরকার সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনবিভাগগুলোকে। সমগ্র আইন প্রক্রিয়াটি গণমাধ্যমের সাহায্যে জনগণের কাছে বার বার ফোকাস করা দরকার। একটি কালো আইন জনগণের প্রতি প্রথম অবিচার। কোন আইন পাশ হওয়ার আগে জনগণের কাছেগণমাধ্যমের সাহায্যে ব্যাপকভাবে প্রচার করা দরকার যাতে আইনটির ওপর বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া যাচাই করে জনস্বার্থ খুঁজে বের করা যায় এবং জনস্বার্থের নিরিখে আইনটির প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা যায়। এতে সংসদ সদস্য মহোদয়গণ আইনটির উপর সুচিন্তিত মতামত সংসদে পেশ করতে সক্ষম হবেন।
সরকারি কর্মচারীগণ মন্ত্রী মহোদয়ের মাধ্যমে সরকারের কাছে জবাবদিহি করেন। সরকার সংসদে জবাবদিহি করে । পৃথিবীর কোনো দেশে সংসদ সদস্য মহোদয় গণের আনুষ্ঠানিক কোনো জবাবদিহিতা কারো কাছে নেই। অথচ সংসদকে কার্যকর করার ক্ষেত্রে তাঁদের কর্মতৎপরতায় মুখ্য। হয়তো অনেকে বলবেন পাঁচ বছর পর যখন জনগণের কাছে আবার ভোট চাইতে যান তখনই জবাবদিহিতা হয়ে যায়। আধুনিক কালে পাঁচ বছর অনেক লম্বা সময়। কাজেই পাঁচ বছর পরপর জবাবদিহিতা প্রকারান্তরে কোনো জবাব দিহিতা নয়। একদিনের ভোটে জনগণ গণতন্ত্রের কোনো স্বাদ গন্ধ পায় না। এজন্য রেফারেণ্ডাম হলে জনগণ গণতন্ত্রের বিপক্ষেও ভোট দিতে পারে।
আইনের জগতে আমাদের এমপিদের বিচরণ কম।টেলিভিশনে এমপিদের অংশ গ্রহণে আইন প্রণয়ন বিষয়ক বেশি বেশি টকশো হওয়া দরকার। এম পি মহোদয়রা যদি তাঁদের নিজ নিজ জেলা বারগুলোতে সিভিল সমাজের সাথে সভা করে সংশ্লিষ্ট আইনসহ বিদ্যমান সকল আইনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোকপাত করতে পারেন এবং স্থানীয় পর্যায়ে সভা-সেমিনার করে জনমত সৃষ্টি করতে পারেন তাহলে আইন জনস্বার্থে প্রণীত হওয়াটা অবশ্যম্ভাবী হবে। সঠিক আইন প্রণয়নের সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ও কাংক্ষিত প্রশাসনিক সংস্কারও হয়ে যাবে।
সংসদ সদস্যগণের কাছে জনগণের অনেক প্রত্যাশা থাকে। কেউ রিলিফ চায়, কেউ চাকরি চায়, কেউ কাজ চায়, কেউ জমি চায়, কেউ জমির নাম পত্তন করে চায়, কেউ মামলায় খালাস চায়, কেউ কোনো মামলায় ন্যায় বিচার চায়, কেউ জুলুম অত্যাচার থেকে মুক্তি চায়। সংসদ সদস্যগণ তাৎক্ষণিকভাবে সেইসব দিতে অপারগ হলে জনগণ খুব অসহায় বোধ করে। জনগণের প্রত্যাশা জনপ্রতিনিধিদের কাছে অনেক। সেইসব প্রত্যাশা পূরণ করতে গিয়ে জনপ্রতিনিধিগণ আমলাদের কাছে বাধ্য হন তদবির করতে। কিছু তদবির হয় আইনসঙ্গত এবং কিছু তদবির হয় বেআইনি। এইসব তদবির সমূহ প্রপার চ্যানেলে অর্থাৎ পার্লামেন্ট সচিবালয় এর মাধ্যমে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে যাওয়া উচিত এবং আইনগত প্রক্রিয়ায় তার ফলোআপ কার্যক্রম গৃহীত হওয়া উচিত।এছাড়াও বিভিন্ন অফিস আদালতে সরেজমিন ভিজিট এবং সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে এমপি মহোয়দরা আইন এবং অফিসের বাস্তব কার্যকারিতা যাচাই করতে পারেন। পেশাদারিত্ব অর্জনের জন্য প্রয়োজনে ইউরোপের সুখী দশটি দেশের পার্লামেন্টগুলোতে তাঁরা ভিজিট করতে পারেন।
দেশে স্থায়ী আইন কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আইন কমিশনে পার্লামেণ্টারিয়ানদের সংশ্লিষ্টতা বা এনগেজমেন্ট খুব একটা চোখে পড়েনা।কারণ আইন কমিশন বা কোনো এমপির ব্যক্তিগত উদ্যোগে নতুন কোনো আইন সংসদে পাশ হয়েছে এমন কোনো নজির দেশে নেই। উদ্যোগ যে নেয়া হয়নি তা কিন্তু নয়। আইন কমিশনের সবচেয়ে বড় কর্তব্য হওয়া উচিত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে বিদ্যমান ক্ষমতা কাঠামো সমূহকে সুবিন্যস্ত করা যাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে। অর্থাৎ সবকিছু গণতন্ত্রায়ন করা। বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন প্রণয়ন সংস্কৃতিতে সিভিল সোসাইটির একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা দরকার । এই ভূমিকা পালন করার মাধ্যমে সশস্ত্র ব্যক্তিদের ওপর নিরস্ত্র ব্যক্তিদের কর্তৃত্ব কায়েম হবে। অস্ত্রের ওপর আইনের কর্তৃত্ব এবং সন্ত্রাসের উপর জ্ঞান ও শিক্ষার কর্তৃত্ব আপনা থেকে চলে আসবে। গডফাদার এবং গ্যাং সংস্কৃতি থেকে জাতি ধীরে ধীরে মুক্ত হবে।গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনেরযা পূর্বশর্ত। সিভিল সোসাইটির কাঠামো বা নেটওয়ার্ক থাকতে পারে ; শিক্ষক সমাজ, আইনজীবী সমাজ, সাংবাদিক সমাজ,অবসরপ্রাপ্ত চাকুরীজীবী সমাজ, বণিক সমাজও ছাত্রসমাজ। সামাজিক ভারসাম্য রক্ষার্থে পরবর্তীতে এর সংযোজন ও বিয়োজনের বিধান রাখা যেতে পারে। সিভিল সমাজ প্রত্যেক বছরে সামাজিক ইস্যুগুলো নিয়ে একটি প্রতিনিধি সম্মেলন বা কনভেনশনের আয়োজন করতে পারে । প্রত্যেক বছরে সদস্যগণ প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগদান করে দেশের বিদ্যমান আইনগুলোর ত্রুটি-বিচ্যুতি পর্যালোচনা করতে পারে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ এই সম্মেলনে অতিথি হিসাবে আইনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে পারেন। অতঃপর সোসাইটি রেজুলেশনের মাধ্যমে আইন সংক্রান্ত মতামত আইন কমিশনে পাঠাতে পারে।মাঝে মাঝে সোসাইটির কর্মকাণ্ডকে টেলিভিশনের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরা যেতে পারে যাতে তারা নিজেদের কাজে অনুপ্রেরণা লাভ করতে পারে। সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যগণ সিভিল সমাজের সাথে আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করতে পারেন। সিভিল সমাজও প্রণীতব্য আইনের বিষয়ে মুক্ত আলোচনার আয়োজন করতে পারে।
উপসংহারে সংবিধানের আলোকে জনগণ এবং জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতা এবং স্থানীয় সরকারের গঠন প্রকৃতি নিয়ে কিঞ্চিত আলোকপাত করা হল;
অনুচ্ছেদ ৭(১) প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হবে।
এখানে জনগণকে প্রজাতন্ত্রের মালিকানা দেয়া হয়নি। প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিকানা দেয়া হয়েছে। কিন্তু তা সরাসরি প্রয়োগ করার কোনো ক্ষমতা জনগণকে দেয়া হয়নি।এজন্য জনগণকে কেঊ পাত্তা দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করেনা। জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হওয়ার কথা বলা হয়েছে।আইনের প্যাঁচে জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করবে কেবল জন প্রতিনিধি গণ।এজন্য জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতা প্রতিপত্তি এবং প্রটোকল এত বেশি। আবার প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিকানা শুধুমাত্র ভোটের দিনের জন্য ।এ একদিনের মালিকানা নিয়ে জনগণ তাহলে কি করবে ? ভোট হলে ভোটের দিনই দলের মনোনীত কোনো ব্যক্তিকে ক্ষমতাটি যথাশীঘ্র হস্তান্তর করে ক্ষমতাহীন হয়ে যাবে। ভোট না হলে আরো ভাল। শুধু একদিনের জন্য ক্ষমতার মালিক হলেও জনগণ এ ক্ষমতা কোথাও প্রয়োগ করতে পারবে না। জনগণ ক্ষমতা হাতে নিয়ে শুধু ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকবে এবং যথাশীঘ্র ভোটদান পূর্বক আগের মত মফিজ হয়ে যাবে। কাজেই এ মফিজের গণতন্ত্র হাপুকানা জনগণের কি কাজে লাগবে তা বুদ্ধিজীবীদের ভেবে দেখতে হবে।
এ অনুচ্ছেদ মতে সার্বভৌম কে জনগণ না সংবিধান এ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে। এ এবিষয়ে দ্ব্যর্থহীন ব্যাখ্যা কেবল মহামান্য অ্যাপীলেট বিভাগের এখতিয়ারভূক্ত। জনগণ নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে না। নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে গণপরিষদ অর্থাৎ জনপ্রতিনিধিগণ। জনপ্রতিনিধি গণরাষ্ট্রের মূল মালিককে মাইনাস করে সংবিধানকে সার্বভৌম করার আইন বানাতে পারে কি ? কিংবা জনপ্রতিনিধি গণ জনগণকে মাইনাস করে নিজেরাই রাষ্ট্রের মালিক হতে পারে কি ? এ বিষয়ে দ্ব্যর্থহীন ব্যাখ্যা কেবল মহামান্য অ্যাপীলেট বিভাগের এখতিয়ারভূক্ত।জনগণের মালিকানার বিষয়টি সংবিধানে আরো খোলাসা হওয়া উচিৎ।
অনুচ্ছেদ ৭০ – কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরুপে মনোনীত হয়ে কোনো ব্যক্তি সংসদসদস্য নির্বাচিত হলে তিনি যদি
অনুচ্ছেদ ৭০ (ক) উক্ত দল হতে পদত্যাগ করেন ,অথবা
(খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন,
তাহলে সংসদে তাঁর আসন শূন্যহবে,তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোনো নির্বাচনে সংসদ সদস্য হবার অযোগ্য হবেন না।
যাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করা হবে তাঁর একমাত্র কাজ হল সরকারী বিলের পক্ষে ভোট দেয়া। কেননা সংবিধানের সত্তর অনুচ্ছেদ মোতাবেক বিলের বিপক্ষে ভোট দিলে তিনি আর এম পি থাকতে পারবেন না। সরকারের প্রতি অনাস্থার তো কোনো প্রশ্নই আসে না। যেহেতূ বিপক্ষে ভোট দেয়ার কোনো অবকাশ নেই সেহেতু বিচক্ষণ এবং বুদ্ধিমান এমপি মহোদয়গণ সরকারি বিল নিয়ে আলোচনায় অংশ না নেয়াকেই শ্রেয় বিবেচনা করেন । এমপি মহোদয়গণের পদত্যাগ করার কোনো স্বাধীনতাও নেই। বাক স্বাধীনতা তো বহুদূরের কথা। কেননা সংবিধানের সত্তর অনুচ্ছেদ মোতাবেক পদত্যাগ করলে তিনি আর এম পি থাকতে পারবেন না।এমতাবস্থায় জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে সংসদসদস্য মহোদয়গণের কার্যকর ভূমিকা পালনের কোনো অবকাশ নেই। সংসদে আমরা যে তুমুল বাকবিতণ্ডা দেখি তা আইওয়াশ মাত্র।
অনুচ্ছেদ ১১ গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার :
প্রজাতন্ত্র হবে একটি গণতন্ত্র যেখানে মৌলিক মানবাধিকার এবং স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে। মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।
এ অনুচ্ছেদের শেষ বাক্যটি হল প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পার হলেও বাক্যটিকে কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। এখানে অনেক প্রশ্ন আছে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ দলীয় না নির্দলীয় হবে। যদি দলীয় হন তাহলে জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসন শতবছরের ঐতিহ্য হারিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় হয়ে যাবে। আবার যদি নির্দলীয় হন তাহলে জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসন দলের বাইরে চলে যেতে পারে।দলের বাইরে গেলেও নির্দলীয় জনপ্রতিনিধিত্ব রাষ্ট্রের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।তাছাড়া দেশের স্বার্থান্বেষী মহল চায় না স্থানীয় সরকার শক্তিশালী হোক। রাষ্ট্রে জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসন দুটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। সরকার এ দুটি প্রতিষ্ঠানকে বিলুপ্ত করার ঝুঁকি নিতে চায় না। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং জেলাপরিষদ তহবিলের জন্য কেন্দ্রনির্ভর এবং খুবই দুর্বল প্রকৃতির স্থানীয় সরকার। এ গুলোর ভাল কাজের নজির খুব কম এবং ভাবমূর্তি সঙ্কট আছে।ক্যাম্প নির্ভর এবং ব্যয়বহুল নির্বাচন সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে পারলে এবং ভাল মানুষদের নির্বাচনে আনতে পারলে ভাল কিছু আশা করা যেতে পারে। স্থানীয় সরকারগুলোর নিজস্ব সম্পদ আহরণের সক্ষমতা নেই বললেই চলে।আয়কর এবং ভ্যাট আদায়ের কিছু ক্ষমতা হস্তান্তর করলে স্থানীয় সরকারগুলো শক্তিশালী হতে পারে যা এমপি মহোদয় গণ চায়না। দেশের বুদ্ধিজীবী মহলে এ নিয়ে ব্যাপক কোনো আলোচনা পর্যালোচনা নেই।
মুঃ আবদুল হাকিম
যুগ্ম সচিব(অবসর প্রাপ্ত)