প্রশাসনিক সংস্কার এবং স্বার্থান্বেষী মহল

মুঃ আবদুল হাকিম :
সমাজের প্রশাসনকে স্বচ্ছ করার ক্ষেত্রে যেসব আইন কানুন প্রবর্তিত হওয়া উচিত ছিল তা নানান স্বার্থান্বেষী গ্রুপের হস্তক্ষেপের কারণে প্রবর্তিত হয়নি। স্বার্থান্বেষী গ্রুপের স্বার্থকে সংরক্ষণ করার জন্য জনস্বার্থকে উপেক্ষা করা হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে এইসব ঘটেছে তার কিঞ্চিৎ দৃষ্টান্ত ধারাবাহিকভাবে নিম্নে বর্ণনা করা হলো:
(১) ভূমি প্রশাসন :
এদেশে বিগত ৫০ বছরে ভূমি প্রশাসনের অনেক কিছু করার ছিল। করা হয়নি। ভূমি সংস্কারের নামে যা করা হয়েছে তা ভূমি প্রশাসনকে স্বচ্ছ ও সাবলীল করার পরিবর্তে আরো জটিল করে তুলেছে।ভূমি সংস্কার বোর্ড ও ভূমি আপিল বোর্ড গঠন করায় ভূমি প্রশাসন মাথা ভারী হয়েছে। এতে জনগণের কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধিত হয়নি। যেখানে সিভিল কোর্টে প্রতিকারের অবকাশ আছে সেখানে বিভাগীয় কমিশনারের সিদ্ধান্তই মাঠ প্রশাসনে চূড়ান্ত ও পর্যাপ্ত হওয়া উচিত। কারণ সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি এরপরও সহকারী জজ আদালত, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে প্রতিকার পেতে পারেন। তাহলে ভূমি আপিল বোর্ড ও ভূমি সংস্কার বোর্ড গঠনের প্রয়োজন টা কি ছিল ? এটি প্রশাসনকে অতিমাত্রায় কেন্দ্রীকরণ করা মাত্র। এতে জনগণের উপকৃত হওয়ার চেয়ে অপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ গ্রামের জনগণ রাজধানীতে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত প্রতিকার পাবে এটা দুরাশা মাত্র। অপরদিকে অর্থবান লোকজন রাজধানীতে এসে তাদের স্বার্থ উদ্ধারে যথেষ্ট কামিয়াব হবে এটাই স্বাভাবিক। ভূমি জরিপ একটা বিভাগে ,ব্যবস্থাপনা অপর বিভাগে এবং ভূমি কেনাবেচা রেজিষ্ট্রীকরণ অপর আরেকটি বিভাগে থাকার জন্য দেশে আজ এত লক্ষ লক্ষ মামলার জট। ভূমির মালিকানা এবং রেকর্ডগত অসামঞ্জস্য কিভাবে দূর করা যায়। শুধু বিভাগই আলাদা তা নয়। ভূমি হস্তান্তর রেজিস্ট্রিকরণ আইন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত। অথচ আইন মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কাজের সাথে এর কোন সাযুজ্য নেই। জনস্বার্থে এই তিনটি বিভাগের কার্যক্রম সমন্বিত হওয়া উচিত। এইসব কর্মকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের স্বার্থে নয়। অথচ মুয়ীদ কমিটির এই সংক্রান্ত সুপারিশ স্টাম্প ভেন্ডরদের গোষ্ঠীগত স্বার্থের খাতিরে বানচাল হয়ে গিয়েছিল।এখানেও জনস্বার্থ গোষ্ঠী স্বার্থের কাছে হার মেনেছিল এবং উপেক্ষিত হয়েছিল । তবে আশার কথা হল সরকার অতি সম্প্রতি এলটি নোটিশের ভিত্তিতে খারিজ করার সিদ্ধান্ত প্রদান করায় জনগণের দুর্ভোগ অনেকটা লাঘব হয়েছে। ভূমি রেকর্ড ডিজিটালাইজেশনের সুফলও জনগ ণ ইতিমধ্যে পেতে শুরু করেছে।
ভূমি প্রশাসন সংক্রান্ত আইন কানুনের অস্বচ্ছতা ও জটিলতার কারণে দেশে সিভিল ও ক্রিমিনাল কোর্টে এত মামলা। সিভিল কোর্টে কমপক্ষে শতকরা আশী ভাগ মামলা এবং ক্রিমিনাল কোর্টে কমপক্ষে শতকরা ষাটভাগ মামলা ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ থেকে উদ্ভূত হয়। এইসব মামলার সংখ্যাধিক্য থেকে অনুমান করা যায় গ্রামীণ কাজের অভ্যন্তরীণ শৃংখলা কতটা বিপর্যস্ত। সিভিল প্রসিজার কোডের সংস্কারে এখনো হাত দেয়া হয়নি। এ আইনটির জন্য বছরের পর বছর মামলা আদালতে ঝুলে থাকে। বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবন নিঃশেষ হয়ে যায় বিচারের আশায় আদালতের বারান্দায় বারান্দায় ঘুরতে।
ভূমি শিলিং এর ক্ষেত্রেও এই দেশে একটি বৈষম্যপূর্ণ আইন বিরাজ করছে । গ্রামের জমির সর্বোচ্চ সীমা ষাটবিঘা অথচ শহরের জমির সর্বোচ্চ কোন সীমা নেই। শহরের এক শতাংশ জমির মূল্য কোন কোন ক্ষেত্রে চরের ৬০ বিঘা জমির মূল্যের চেয়ে বেশি। এছাড়া শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগের কোন সীমা নেই। ব্যবসা বাণিজ্যেও বিনিয়োগের কোন সীমা নেই, শহরের লোকের আয় উপার্জনের ক্ষেত্রেও কোন সীমা পরিসীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। সংবিধানে ব্যক্তিগত মালিকানা সীমিত করার দিক নির্দেশনা থাকলেও এ সংক্রান্ত কোনো আইন এখনো প্রণয়ন করা হয়নি। তাহলে গ্রামের জমির ক্ষেত্রে কেন এই সিলিং ? এটি এমন একটি বৈষম্য যা সামাজিক ন্যায়বিচার ধারণার পরিপন্থী।
অর্থ প্রশাসন
দেশে আরেকটি অসম আইন বিরাজ করছে সরকারি পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে। সরকারের কাছ থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার ঋণ গ্রহণ করে ঋণগ্রহীতাগণ আর তা ফেরৎ দিচ্ছে না।আইনগত দুর্বলতার কারণে সরকার তা তাদের কাছ থেকে আদায় করতে পারছে না। সরকারি পাওনা আদায় আইন এবং অর্থ ঋণ আদালত সংক্রান্ত আইন কে শক্ত করে দেশে হাজার হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায় করা সম্ভব। অথচ দেশে এই ঋণ আদায়ে কোনো শক্ত আইন প্রণীত হচ্ছে না। ফলে হর হামেশা ব্যাংক লোপাটের মত ঘটনা ঘটছে এবং বিদেশে অবাধে টাকা পাচার হচ্ছে। ব্যাংকে ঋণ খেলাপের পরিমাণ ভয়াবহ আকারে বাড়ছে এবং লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন সং শোধন করে ব্যাংক গুলোকে পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। আমাদের দেশের কোম্পানিগুলো মুলতঃ পারিবারিক কোম্পানির মত। এদের লাভ ক্ষতির নির্ভুল হিসেব কারো কাছে নেই। বাংলাদেশের অধিকাংশ ধনী আয় অনুপাতে আয়কর প্রদান করে না। কোথাও তাদের প্রকৃত আয়ের সঠিক তথ্য নেই। এদেশে কখনো ধনী শুমারি হয় না। অর্থনীতি সমিতি সংবাদ সম্মেলন করে জানায় দেশে কালো টাকার পরিমাণ আশি লক্ষ কোটি টাকার বেশি এবং দেশে বিশ লক্ষ কোটি টাকার বেশি আয়কর আদায় সম্ভব। সরকার এ তথ্যকে এখনো চ্যালেঞ্জ করে নি। ব্যক্তিগত খাতের মত কর্পোরেট খাতেও আর্থিক স্বচ্ছতার দারূণ অভাব। ব্যাংক এবং পুঁজি খাত অশুভ শক্তির অক্টোপাশ থেকে বের হতে পারছে না। ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত কর্পোরেট করহার মড়ার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে কাজ করছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ব্যবসা এবং বিনিয়োগ পরিবেশে। ফলশ্রুতি স্বরূপ কাংক্ষিত কর্ম সংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না।
স্থানীয় সরকার
আমাদের সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে বলা আছে প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। দেশে বিগত ৫০ বছরে উল্লেখযোগ্য কোন স্থানীয় সরকার অবকাঠামো গড়ে উঠেনি। বর্তমান জেলা পরিষদ এবং উপজেলা পরিষদ আইনেও স্থানীয় সরকারগুলো শক্তিশালী হয়নি। বরং ব্রিটিশ আমলের জেলা বোর্ডের কার্যকারিতাকে খর্ব করা হয়েছে। সাংসদগণ নির্বাহী কর্মকাণ্ডে ক্রমশ অতিউৎসাহী হয়ে উঠছেন। স্থানীয় সরকার অবকাঠামো মজবুত না থাকার কারণে তারা এইসব নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারছেন। শক্তিশালী স্থানীয় সরকার হলে তাদের এই নির্বাহী ক্ষমতা লোপ পাবে। এই কারণে তারা স্থানীয় সরকার কাঠামো শক্তিশালী করতে অনীহা প্রকাশ করছেন অথবা নিলিপ্ত ভূমিকা পালন করছেন।
তাছাড়া আরেকটি কারণে এই দেশে স্থানীয় সরকার অবকাঠামো শক্তিশালী হয়নি। কারণটি হল স্থানীয় সরকার কার্যকর হলে কেন্দ্রের অতিমাত্রায় ক্ষমতায়ন ব্যাহত হবে। অথচ কেন্দ্রের অতিমাত্রায় ক্ষমতায়ন জনস্বার্থ বিরোধী। এতে জনগণের প্রশাসনে অংশগ্রহণ ও উন্নয়ন হবে সুদূর পরাহত। সংসদের কোন কোন আইন ঘনঘন সংশোধনের জন্য আসে। সিকস্তি পয়স্তি সংক্রান্ত আইন এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। অথচ যেসব আইন জনস্বার্থে সংশোধন করা উচিত সেসব আইনের সংশোধনীর কোন উদ্যোগ দৃষ্টিগোচর হয় না।
আধুনিক রাষ্ট্রে সরকার সকল ক্ষমতা ও শক্তি কেন্দ্রে ধরে রাখে না। সরকার বিদ্যমান বিভিন্ন সামাজিক শক্তি সমূহের মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টি করে মাত্র। সামাজিক শক্তিগুলো নিজ নিজ স্বার্থে সচেতন । সবল সামাজিক শক্তি নিরব ও দুর্বল সামাজিক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ ও শোষণ করবে এটাই আধুনিক জগতের রূঢ় বাস্তবতা।
আইন বিভাগ
পার্লামেন্ট দেশের একমাত্র আইন প্রণয়নকারী সংস্থা এবং রাষ্ট্রের দ্বিতীয় স্তম্ভ । আইন প্রণয়ন একমাত্র পার্লামেন্টের কাজ হওয়া উচিত এবং এ কাজে প্রতিমুহূর্তে তার সক্ষমতা বাড়ানো উচিৎ যাতে সাংসদগণ রাষ্ট্রের অন্য কোনো কাজে মনোনিবেশ করার অবকাশ না পায়। আমাদের দেশে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আছে।অথচ সাংবিধানিকভাবে আইন ও বিচার যথাক্রমে আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের কাজ । স্পীকারের নেতৃত্বাধীন পার্লামেন্টে একটি সংসদ সচিবালয় আছে। আইনের খসড়া প্রণয়ন, সংশোধন এবং ভেটিং এর কাজে সংসদ বিষয়ক সচিবালয়ের অফিসারদের দক্ষ এবং সক্ষম করে গড়ে তোলা যেতে পারে। সেই সাথে এম পি দের বেশি বেশি করে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। অথচ আমাদের দেশে তা করা হয় না। আইনের খসড়া প্রণয়ন, সংশোধন এবং ভেটিং এর কাজটি করে লেজিস্লেটিভ ডিভিশন। আইন প্রণয়নে সংসদীয় সম্পৃক্ততার চেয়ে নির্বাহী বিভাগের সম্পৃক্ততা বেশি। বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের তৃতীয় স্তম্ভ। বিচার বিভাগ স্বাধীন। বিচারকদের বাছাই এবং নিয়োগ হয় জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন থেকে।অথচ বিচারকদের পদায়ন এবং পদোন্নতি নিয়ন্ত্রিত হয় আইন মন্ত্রণালয় থেকে যা রাষ্ট্রের প্রথম স্তম্ভের অধীন।অর্থাৎ এখানেও ক্ষমতার ভারসাম্যের সীমান্ত প্রাচীর কাজ করছে না।
দেশের সংসদ সদস্যগণ আইন প্রণয়নের চেয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে কর্তৃত্ব প্রকাশ করতে বেশি আগ্রহী। এইজন্য তারা স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে চায়না।সংসদ সদস্যগণ নির্বাহী কর্মকান্ডে এখন পুরো মাত্রায় সম্পৃক্ত। ক্ষমতার সকল সীমান্ত পিলার ভেংগে পড়ছে। সংসদীয় গণতন্ত্রে দল এবং সরকার অভিন্ন নয়।এজন্য দলের কাছেও সরকার আলাদাভাবে জবাবদিহিতা করে।এমপিরা নির্বাহী বিভাগের অংশ নয়। অথচ আমাদের দেশে শাসন বিভাগের কর্মকাণ্ডে এম, পি দের প্রভাব অপরিসীম। খেলার সামগ্রী বিতরণ,রিলিফ বিতরণ, গম বিতরণ, প্রকল্প প্রণয়ন ও বাছাই ইত্যাদিতে স্থানীয় প্রশাসকের ওপর এমপিদের কর্তৃত্ব আছে। স্থানীয় প্রশাসকদের বদলি তাদের ইচ্ছা অনিচ্ছা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অর্থাৎ এখানেও আইন বিভাগের ব্যক্তিবর্গ শাসন বিভাগের কর্মকাণ্ডে বিপুলভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। তৃতীয়তঃ বিচার বিভাগে। বিচারকদের নিয়োগ আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন। ফলে এইসব মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী কর্তৃত্ব বিচার কার্যক্রমেও প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এমতাবস্থায় কিভাবে একটি স্বাধীন আইন বিভাগ, স্বাধীন শাসন বিভাগ এবং স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা সম্ভব?
বাংলাদেশের মতো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রশাসনের উপযোগিতা কি? সংসদীয় সরকারের প্রশাসনে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা মুখ্য নয়। এ ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে মন্ত্রিপরিষদ। বিশ্ব ব্যাংক, দাতাগোষ্ঠী এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন সমূহ বাংলাদেশের প্রশাসনিক সংস্কারের জন্য দীর্ঘদিন থেকে আহ্বান জানিয়ে আসছে। কোন কোন ক্ষেত্রে সংস্কার অপরিহার্য সে বিষয়ে তারা মাঝে মাঝে দিকনির্দেশনা প্রদান করছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জনমত প্রশাসনিক সংস্কারে আগ্রহী। বিশেষ করে ঔপনিবেশিক আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে জনমত সোচ্চার। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা হয় । গত ৫০ বছরে বাংলাদেশে গণতন্ত্রও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে নি। কোন মতে গণতন্ত্র হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের পত্রপত্রিকা পড়ে যেটুকু বুঝা যাচ্ছে তাতে দেশের বুদ্ধিজীবী মহল গণমুখী,স্বচ্ছ, কার্যকর এবং জবাবদিহিমূলক প্রশাসন চাইছেন। প্রশাসনের ভূমিকার কথা অনেকে বলেছেন নিয়ন্ত্রণমূলক হবে না । হবে সহায়তামূলক। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানও চাইছে সরকার সেবার নিশ্চয়তা প্রদানকারী একটি সংস্থা হিসেবে বিকশিত হোক।সরকারের নিয়ন্ত্রণ মুলক কর্মকাণ্ডের পরিধি ছোট হোক। সরকারি ব্যবস্থাপনার পরিমন্ডল সংকুচিত হোক। দেশের যাবতীয় বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট হওয়ার মাত্রা হ্রাস পাক। বিশ্ব ব্যাংকও চায় সরকারের আকার ও আয়তন ছোট হোক। কর্মকর্তা ও কর্মচারী অনুপাত কমে আসুক। সরকার ,দল, রাষ্ট্র, আইন,প্রশাসন,বিচার ও জনগণকে পৃথক পৃথক সত্তা ধরে সাংবিধানিকভাবে দায়িত্ব ন্যস্ত করা সমীচীন। বর্তমানে সরকার ও প্রশাসনের সর্বব্যাপকতা, অতিমাত্রায় কেন্দ্রিকতা এবং সেবা সরবরাহে অযৌক্তিক বাতাবরণ সৃষ্টি করার কারণে প্রশাসন ক্রমশ গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। বিশাল বপু নিয়ে সরকার অস্তিত্বমান। অথচ সরকারের এই বিশাল শরীর জনগণের সেবায় কার্যকরভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। সমগ্র রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে সচিবালয়, ঢাকাস্থ অধিদপ্তর এবং পরিদপ্তর সমূহ। বিভিন্ন জাতীয় সংস্থার সদর দপ্তর ঢাকা। ঢাকা ক্ষমতা ধরে রাখছে। ঢাকা দেশের ৬৪ জেলা এবং ৪৬৪ উপজেলাকে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করতে নারাজ। সবকিছুকে ঢাকামুখী করে গণমুখী প্রশাসনের ধারণা অবাস্তব এবং অমূলক। বরং তাতে ঢাকার বারোটা বাজবে এবং দেশেরও অবস্থাও হবে বেহাল । স্থানীয় সরকারকে ক্ষমতা দিলে সব লুটেপুটে খাবে বলে ক্ষমতা না দেওয়ার একটা খোঁড়া যুক্তি পেশ করা হয় ।দেশের অধিকাংশ জনগণকে কোনদিন ঢাকামুখী করা যাবে না। যদি জবাবদিহিতার কথায় বলা হয় তাহলে প্রশাসন কার কাছে জবাবদিহিতা করবে। নিশ্চয়ই জনগণের কাছে। তাহলে জনগণ যেখানে আছে সেখানে প্রশাসনকে অবশ্যই নিয়ে যেতে হবে। প্রশাসন জনগণের কাছাকাছি থেকে খোলামেলাভাবে কাজ করবে। জনগণের কাছে প্রশাসনের গোপন করার মত কোন বিষয় থাকতে পারে না। জনগণই জনস্বার্থ দেখবে। প্রকাশ হলে জনস্বার্থ বিরোধী কাজ জনগণ প্রতিহত করবে। স্থানীয় সরকার শক্তিশালী হলে কেন্দ্রীয় সরকারও শক্তিশালী হবে। কেন্দ্রীয় সরকার যতই শক্তিশালী হোক না কেন এযুগে কার্যকর ভাবে স্থানীয় প্রশাসন পরিচালনা তার পক্ষে সম্ভব নয়।