পেশাদারিত্ব এবং পেশাজীবীত্বের উন্নয়নের জন্য পেশাভিত্তিক উচ্চকক্ষ

মুঃ আবদুল হাকিম
পৃথিবীর ৪০% দেশে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা আছে এবং এদেশগুলোর সবগুলোই গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র।পেশাজীবীরা বিভিন্ন পেশাস্বার্থের সাথে জনস্বার্থের সমন্বয় করে মানবসেবায় নিয়োজিত এবং নিবেদিত। দেশ ও জাতির নতুন নতুন প্রয়োজনে নতুন নতুন পেশাজীবী সৃষ্টি একটি চলমান প্রক্রিয়া।পেশাজীবীদের কর্মের ধর্মই হল সর্বদলীয় এবং সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা। জনগণের কাছে তাদের পক্ষপাতমূলক এবং বর্ণবাদী আচরণ কাম্য নয়। কিন্তু পেশাজীবীদের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ থাকার আইনী রক্ষাকবচ না থাকলে পৃথিবীর কোনো দেশেই পেশাজীবীগণ স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ থাকতে পারে না। ভারতের সংবিধানের ৩১১ অনুচ্ছেদে সরকারী চাকুরিজীবীদের স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ থাকার সাংবিধানিক সুরক্ষা আছে যা বাংলাদেশে নেই। যার ফলে পেশাজীবীত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা পেশাজীবীদের সাংবিধানিক রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করতে পারে এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় সরাসরি অংশীদারিত্ব অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি করতেপারে। অর্থাৎ তাঁরা রাষ্ট্রশক্তির মর্যাদা লাভ করবে। এ আইনসভা রাষ্ট্রের যথার্থনীতি এবং আইন প্রণয়নে পেশাজীবীদের সক্রিয়তা এবং সক্ষম অংশগ্রহণকে ক্রমশঃ বিকশিত করবে। উদাহরণস্বরূপ ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার লোপাট রোধে ব্যাংকার, ব্যাংক ও পুঁজিবাজারে অর্থ সঞ্চয়কারী সমিতি সম্মিলিতভাবে ব্যাংক ও পুঁজিবাজার সংস্কারে এ সভায় কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। অনুরুপভাবে বিদেশে টাকা পাচার, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি,ধনতন্ত্রের বিকৃত বিকাশ এবং আয়বৈষম্য রোধে এটি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে । দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার মাধ্যমে ছাত্র এবং শিক্ষক সমাজও নীতি ও আইন প্রণয়নে সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করবে। ছাত্র এবংপেশাজীবীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের কোনো শক্তিশালী ফোরাম নেই। এটি সেই শূন্যস্থান পূরণ করবে। সর্বোপরি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা জনস্বার্থের প্রহরী এবং অভিভাবক হিসেবে কাজ করবে।
১৯৭২ সনের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০খ(১)(খ)(ই) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বা ছাত্র এবং আর্থিক, বাণিজ্যিক বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বা সংস্থার কর্মচারি বা শ্রমিকদের সমন্বয়ে বা অন্যকোনো পেশার সদস্যগণের সমন্বয়ে সহযোগী বা অংগসংগঠন থাকবে না। তবে শর্ত থাকে যে তাদের স্বস্বক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে সংগঠিত হবার বা সংগঠন, সমিতি, ট্রেড ইউনিয়ন ইত্যাদি গঠন করবার ও বর্ণিত সকল প্রকার গণতান্ত্রিক এবং রাজনৈতিক অধিকার চর্চা করবার ক্ষেত্রে এবং ব্যক্তি হিসেবে বিদ্যমান আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে রাজনৈতিক দলের সদস্য হবার ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকবে না। অনেকে এগুলোকে সহযোগী বা অংগ সংগঠন না বলে ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বলে থাকেন।
মুক্তিযুদ্ধে যুব সমাজের উজ্জ্বল অবদান সত্বেও দেশের দুইকোটি যুবক এখন চাকুরি খুঁজছে এবং এর অধিকাংশ কোনো চাকুরি পাচ্ছে না। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বর্তমানে তেষট্টি লক্ষ ছাত্র পড়াশুনা করছে যাদের অধিকাংশের আগামীতে কোনো চাকুরির আশা নেই। এর বাইরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত কলেজগুলোতে বিশ লক্ষ ছাত্র অধ্যয়ন করছে। বিআইডিএসের গবেষণা মতে যার ৬৬% বেকার থাকছে। এ গবেষণায় আরো জানা যায় দেশের শিক্ষিত গ্রাজুয়েটদের ৪৭% বেকার থাকছে। বেকারত্বের আন্তর্জাতিক সংজ্ঞা অনুযায়ী কেউ সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ না পেলে বেকার এবং পেলে বেকার নয় যা আয় বিবেচনায় বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। বাংলাদেশের পড়ার সিলেবাসের সাথে কাজের সিলেবাসের কোনো মিল নেই। অথচ ছাত্রজীবন মানেই কর্মজীবনের যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণের জীবন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কে বেকার উৎপাদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সমীচীন নয়। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে শুধু সনদবিতরণ কেন্দ্র হিসেবে নয় -মানুষ তৈরীর কারখানা হিসেবে বিকশিত করতে হবে। সনদের পাশাপাশি ছাত্রদের চাকুরির গ্যারান্টি দেয়ার জন্য প্রয়োজনে ক্যারিয়ার ইন্সুরেন্স আইন তৈরী করে আইনী বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করতে হবে। অথচ ছাত্র রাজনীতিতে ছাত্র অধিকার বা ইস্যু ,কর্মসংস্থান, ক্যারিয়ার গঠন,শিক্ষার মান,সিলেবাস পরিবর্তন,বেকার ভাতা বা একাডেমিক পরিবেশ নিয়ে খুব একটা আন্দোলন বা উদ্বেগ উৎকন্ঠা লক্ষ্য করা যায় না। তারা ব্যতিব্যস্ত জাতীয় ইস্যু নিয়ে। শিক্ষক রাজনীতিতে একই অবস্থা বিরাজমান। অথচ শিক্ষক নেতাগণ ফিনল্যান্ড এবং ডেনমার্কে শিক্ষকদের উচ্চ মর্যাদা ও বেতন ভাতাদি সম্পর্কে পুরোমাত্রায় ওয়াকিফহাল। তাঁরা পেশাগত স্বার্থে নয় – ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারবাজির জন্য দলীয় রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত। নিজে পড়াশুনা করা এবং ছাত্রদের ঠিকমত পড়ানো তাঁদের অগ্রাধিকার নয়। অন্ধভাবে দলবাজ উকিল উকালতি পেশায় আত্মোন্নয়ন না ঘটিয়ে রাজনীতির পিছনে ঘুরে ঘুরে সময় নষ্ট করছে। অন্ধভাবে দলবাজ সাংবাদিক নিজের পেশায় আত্মোন্নয়ন না ঘটিয়ে সাংবাদিকতার বস্তুনিষ্ঠতাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এভাবে সকল পেশার দলবাজ লোকজন নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করার জন্য অন্ধভাবে দলবাজি করে পেশাজীবীত্বের সংস্কৃতিকে নষ্ট করে ফেলেছে।এসব সুবিধাবাদী দলবাজরা দেশের দীর্ঘ মেয়াদী কোন সমস্যার সমাধানে ফলপ্রসূ কিছুই করেনি বা করছেনা।তারা শুধু নাগরিক অক্ষমতার মাত্রাকে দিন দিন বাড়িয়ে তুলছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দলবাজি, চামচা গিরি এবং চাটুকারিতা দেশে মহামারি আকার ধারণ করেছে। লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি এবং অংগসংগঠন খোলার জন্য এ খারাপ প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে।কর্মচারীদের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন থাকলে ভারসাম্য রক্ষায় অফিসারদের জন্যও ট্রেড ইউনিয়ন থাকতে হবে। ট্রেড ইউনিয়ন গুলো হবে নির্দলীয় প্রতিষ্ঠান । রাজনীতি আইনের মাধ্যমে দলীয় এবং নির্দলীয় রাজনীতির সীমারেখা নির্ধারণ করে দেয়া দরকার। কোন রাজনৈতিক দলের সাথে তাদের সংযোগ থাকবে না। কারণ সংযোগ থাকলে প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিং অফিসার এবং পুলিং এজেণ্ট একাকার হয়ে যায়।
মূল রাজনৈতিক দল একটিই থাকবে।তবে তার সহযোগীবা অংগ সংগঠন হিসেবে যুব, মাঝবয়সী ও প্রবীণ সংগঠনথাকতেপারে। এগুলোর আবার পুরুষএবং মহিলা সংগঠন থাকতে পারে। সকল রাজনৈতিক দলের প্রবীণ এবং মহিলা সংগঠন রাজনীতিতে সমঝোতা সৃষ্টির দায়িত্ব পালন করতে পারে। কেননা তাঁরা শান্তি ও বাস্তববাদী । রাজনৈতিক দলের জন্য সরকারী কোষাগার থেকে ভোট অনুযায়ী বাজেট বরাদ্দ থাকতেপারে।দলের অফিসগুলোকে রাজনৈতিক দীক্ষাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার সুবর্ণ সুযোগ আছে।মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিবন্ধক অফিস কতৃক প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের আয় ব্যয় প্রতি বছর অডিট করার বিধান চালু করা যেতে পারে। দলীয় নেতা কর্মীদের আয় ব্যয়ের স্পস্টতা ও স্বচ্ছতা থাকবে ।দেশে গুরুত্বপূর্ণ সকল ব্যক্তির আয় স্বচ্ছতা জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। রাষ্ট্র প্রত্যেক নাগরিকের জন্য ন্যূনতম আয়ের ব্যবস্থা করবে।রাষ্ট্র এসব কাজে জ্ঞানুগুণী এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে যাতে বাধ্য হয় তার আইনী কাঠামো সৃষ্টি করতে হবে।
রাষ্ট্র নির্মাণে পেশাজীবীদের অবদানকে খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। পেশাগত উৎকর্ষ উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। ভাল আইন এবং নীতিপ্রণয়নের জন্য পেশা স্বার্থগুলোকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা দরকার। পেশাগত দক্ষতা অর্থনীতির ভিতকে মজবুত করে। পেশাভিত্তিক রাজনীতিকে দলীয় রাজনীতির বাইরে নিয়ে আসা দরকার। দলের রাজনীতি পেশাজীবীদের পেশাগত দাবী আদায়ে খুব একটা কার্যকর হয়নি।দলীয় রাজনীতি করে কতিপয় মুখচেনা ব্যক্তি লাভবান হয়। সে রাজনীতি পেশাজীবীদের কোনো উপকারে আসেনা। এজন্য পেশাজীবীদের দাবী আদায়ে আলাদা একটি পেশাভিত্তিক উচ্চ কক্ষ গঠন করা যেতে পারে।
একজন নাগরিক সমাজের যে কোন পেশাকে জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিতে পারে এবং এক পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যোগদান করতে পারে।এসএসসি পাশ করার পর ছাত্রত্বকে ও একটি পেশা হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। একজন শিক্ষিত মানুষকে এস এস সি পাশ করলে অন্যান্য মানুষের দুই বছর আগে ভোটাধিকারের সুযোগ দেয়া উচিৎ। আমজনতা ও শিক্ষিত জনতার মধ্যে পার্থক্য না থাকলে মানুষ কষ্ট করে কেনো শিক্ষা গ্রহণ করবে ? একজন নাগরিক একই সাথে একাধিক পেশাও বেছে নিতেপারে। এতে দোষের কিছু নেই।কিন্তু রেজিস্ট্রেশন থাকতে ইহবে। কারণ না থাকলে তাতে পেশাগত শৃংখলা বিধ্বস্ত হয় এবং পেশাজীবীদের মধ্যে পেশাদারিত্বের মনোভাব সৃষ্টি হয় না। অর্থাৎ একজন নাগরিক আইনজীবী হলে তিনি একই সময়ে ঠিকাদার বা সাংবাদিকও হতে পারেন। তাতে কোনো অসুবিধা নেই। কেবলমাত্র প্রতিনিধিত্বের সময় যেকোনো একটি পেশা তাকে বেছে নিতে হবে। একজন কৃষক হিসেবে রেজিষ্ট্রেশন নিলে তাকে ব্যবসায়ীর রেজি: দেয়া যাবে না এমন কোনো কথা নেই। কেবল প্রতিনিধিত্বের জন্য অনেকগুলোর মধ্যে তাকে যেকোনো একটি পেশাকেই বেছে নিতে হবে।প্রত্যেক পেশাজীবীর অবদান নিয়ে গড়ে ওঠে দেশের অর্থনীতি।প্রত্যেক পেশাজীবীর কাজের সাথে সুশাসনের সম্পৃক্ততা আছে। প্রত্যেক পেশাজীবীর সাথে রাষ্ট্রের লেনদেনের সম্পর্ক এবং সমীকরণ আছে।
আধুনিক রাষ্ট্র নাগরিক-নিয়ন্ত্রণমূলক নয়- বরং নাগরিক সহায়তামূলক। প্রত্যেক পেশাজীবীর সমস্যা গণতান্ত্রিক ভাবে রাষ্ট্রের কাছে আসবে। প্রত্যেক পেশাজীবী ব্যালটের মাধ্যমে তাদের নিজ নিজ নেতৃত্ব নির্বাচন করবে। ভোটের মাধ্যমে নীতি নির্ধারণে পেশাজীবীদের অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করতেহবে। আবার দপ্তর, সংস্থা , কমিশন এবং মন্ত্রণালয়ে তাদের অংশীজন হিসেবে অংশ নেয়ার অধিকারও নিশ্চিতকরতে হবে। প্রত্যেক বছর নেতৃত্বে নতুননতুন মুখ আনা দরকার।
আমাদের দেশে শ্রমিক না হয়ে শ্রমিক নেতা হওয়া যায়, কৃষক না হয়ে কৃষক নেতা হওয়া যায়। এইসব শ্রমজীবীর নেতা হতে গেলে তাদের ভোটগ্রহণের প্রয়োজন পড়ে না। ফলে কৃষক নেতা কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করছে না। শ্রমিক নেতা শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করছে না। নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে তারা কৃষক ও শ্রমিকের নামটা ব্যবহার করছে মাত্র।এই সব নেতৃত্ব নির্বাচনে গণতন্ত্রের অনুশীলনকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। অসাংবিধানিক এবং অগণতান্ত্রিকভাবে কেউ যাতে নেতা হতে না পারে তার আইনী সুরক্ষা থাকতে হবে। এটাই গণতন্ত্রের মূলকথা এবং তা সমাজে কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। গণতন্ত্র যদি পেশাজীবীদের দাবী-দাওয়া আদায়ের মোক্ষম এবং ফলপ্রদ ব্যবস্থা হয় তাহলে পেশাজীবীগণ অবশ্যই গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখবে অন্যথায় গণতন্ত্রের বাঁচামরার ব্যাপারে তারা নির্লিপ্ত হবে।
কতিপয় পেশাজীবীদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কাউন্সিল আছে। যেমন প্রেস কাউন্সিল, বার কাউন্সিল এবং মেডিকেল কাউন্সিল ইত্যাদি। অনুরূপ আরো কাউন্সিল গঠন করা যায় যেমন ছাত্র কাউন্সিল, শিক্ষক কাউন্সিল, লেবার কাউন্সিল, কৃষক কাউন্সিল, সিভিল সার্ভিস কাউন্সিল ইত্যাদি। তাছাড়া পেশা সৃষ্টিতে আইনের একটা ভূমিকা আছে যেমন-সরকারী কেনাকাটা আইনের মাধ্যমে সরবরাহ, নির্মাণ এবং উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন হয়। এ আইনের মাধ্যমে ঠিকাদার সমাজের সৃষ্টিহয়। বার কাউন্সিল অর্ডারের মাধ্যমে আইন পেশার উদ্ভব হয়েছে। মেডিকেল কাউন্সিল এ্যাকটের মাধ্যমে ডাক্তারি পেশার সৃষ্টি হয়েছে।প্রেস এ্যান্ড পাবলিকেশন্স অডিন্যান্সের মাধ্যমে সাংবাদিক পেশার সৃষ্টি হয়েছে। রেজিষ্ট্রেশন এ্যাকটের মাধ্যমে সাবরেজিষ্ট্রার ওভেনডরপেশা সৃষ্টি করা হয়েছে। তাছাড়া সরকারী কর্মচারীগণ সরকারি কর্মচারী আইনের কারণে বিভিন্ন পেশা বা ক্যাডারে বিভক্ত হয়ে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করছে। অনুরুপভাবে লবি এবং পরামর্শক আইনের মাধ্যমে লবিষ্ট এবং পরামর্শক পেশা সৃষ্টি করা যায়। আইনের মাধ্যমে এই পেশাগুলোর সৃষ্টি হয়েছিল জনস্বার্থ সুরক্ষার জন্য। প্রত্যেক পেশার জন্য কোড অব কনডাক্ট প্রণীত হওয়া দরকারযা লংঘন করলে সেই পেশা থেকে তাকে বহিস্কার করা যায় বা তার বিরুদ্ধে ডিসিপ্লিনারী এ্যাকশন নেয়া যায়।
বাংলাদেশে Bicameral Legislature দরকার আছে। ছাত্রদের, জ্ঞানী গুণীদের অথবা পেশাজীবীদের রাষ্টের কোন না কোন জায়গায় ক্ষমতা দেয়া দরকার। এম.পি, মন্ত্রী এবং অন্যান্য জননেতা হওয়ার জন্য একটা ন্যূনতম যোগ্যতা দরকার। আপার হাউজে পেশাজীবীরা থাকতে পারে। তারা আপার হাউজে প্রতিনিধি নিয়োগ করবে। নীতিনির্ধারণে শিক্ষিত লোকদের একটা ভূমিকা থাকা দরকার। একব্যক্তি এবং এককেন্দ্রের কাছে ক্ষমতা রাখার বহু বিপদ আছে। এজন্য ক্ষমতা বহুকেন্দ্র এবং বহুব্যক্তির হাতে বিভক্ত করে দেয়া উচিৎ। সাংবিধানি কমান্ডেট অনুযায়ী মাঠ প্রশাসনকে স্থানীয় সরকারের সাথে একীভূত করে শক্তিশালী এবং নিরপেক্ষ স্থানীয় সরকার গঠন করা দরকার। দেশেসমাজ এবং রাষ্ট্র চিন্তাবিদদের একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম থাকা দরকার।
অধিকাংশ লোক শান্তিকামী হলে ও দেশকে অর্থহীন সংঘাত ও সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দেয়া লোকের অভাব নেই। দেশের শিক্ষা,শান্তি,প্রগতি, ঐক্য ও সংহতি নিয়ে এখন ভাবছে খুব কম লোক। মুক্তির আকাংক্ষা এখন যেনো ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে। মানুষ আত্ম মর্যাদা হারিয়ে ক্রীতদাসএবং দালাল হয়ে কোন মতে বেঁচে থাকতে আর লজ্জাবোধ করছে না এবং এটাকে অমোঘ নিয়তি ভাবতে শুরু করেছে।