ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৫ বছর আজ

আজ ২ ডিসেম্বর। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর পূর্তি। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রায় দু’দশকের রক্তক্ষয়ী সংঘাত বন্ধে ১৯৯৬ সালে বর্তমান সরকার আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর পাহাড়ের সংকট রাজনৈতিকভাবে সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকার আর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। যা পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি নামে পরিচিত।
সরকারের পক্ষে জাতীয় সংসদের তৎকালীন চীফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ ও পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকল সম্প্রদায়েরর পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় ওরফে সন্তু লারমা এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২ যুগ কেটে ২৫বছরে পা দিলেও পাহাড়ে এখনো বন্ধ হয়নি হত্যা, গুম, চাদাবাজিসহ অপহরণ। অন্যদিকে সরকার চুক্তির বেশীরভাগ ধারা বাস্তবায়িত করার কথা বললেও জনসংহতি সমিতি বলছে, চুক্তির মুল বিষয়গুলি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৫বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে আওয়ামীলীগ, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, স্থানীয় বাঙ্গালী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন পাহাড়ে আজ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করছেন।
পার্বত্য শান্তি চুক্তি মোতাবেক ১৯৯৮সালে জনসংহতি সমিতির তৎকালীন শান্তি বাহিনীর প্রায় দুই হাজার সদস্য সরকারের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছিল।
পার্বত্য চুক্তির বেশীরভাগ ধারা বাস্তবায়িত হলেও স্থানীয় ভোটার তালিকা সংক্রান্ত সমস্যা ও বিভিন্ন জটিলতার কারণে মৌলিক বিষয়ের মধ্যে ভুমি সমস্যার নিরসন না হওয়া, আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন না হওয়া, আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদের নিকট বিভাগ হস্তান্তর না হওয়া, পার্বত্য অঞ্চলে আভ্যন্তরীন উদ্বাস্তু পুনর্বাসনসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বিষয় এখনো অবাস্তবায়িত রয়েছে। সাধারন মানুষ চায় পার্বত্য শান্তি চুক্তি নিয়ে সব ধরনের জটিলতা কেটে যাক।
পার্বত্য চুক্তি নিয়ে এখানকার সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা বলছেন,শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়াতে এখানকার মানুষ এখনও কোন সুফল পাচ্ছেন না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি সম্পাদনকালীন সময়ে পাহাড়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা আওয়ামীলীগ নেতা দীপংকর তালুকদার এমপি বলছেন, শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিক। এ অবস্থায় চুক্তির উভয় পক্ষকে সমঝোতার মাধ্যমে এগুনোর আহবান জানান পাহাড়ের এই নেতা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার জানান, চুক্তি বাস্তবায়নে মুল সমস্যা হলো সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব। চুক্তি নিয়ে সরকারের কি ভাবনা তা পরিস্কার করতে বললেন জনসংহতি সমিতির এই প্রভাবশালী নেতা।
পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদনের পর থেকে পাহাড়ের অবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হলে ও এখানকার অব্যাহত সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের মাধ্যমে সবসময় অশান্তই থাকছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। বিগত কয়েকবছরে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় হত্যা করা হয়েছে আওয়ামীলীগের অসংখ্য নেতাসহ সাধারন মানুষ।
পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে ১৯৯৭ সালে যে প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণে সরকার ও জনসংহতি সমিতির দু’পক্ষকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানিয়েছেন পাহাড়ের শান্তিপ্রিয় মানুষের।