ইন্টারনেটের অপব্যবহার ও অতিমাত্রায় ব্যবহার : আমাদের বাসা-বাড়িগুলোতে এক জাতীয় পঙ্গু প্রজন্ম গড়ে উঠছে

এহছান খান পাঠান:
ইন্টারনেটের কল্যাণে আমাদের বাসা-বাড়িগুলোতে এক জাতীয় পঙ্গু প্রজন্ম গড়ে উঠছে। এরা সারারাত ইউটিউব, ফেইসবুক ইত্যাদিতে পড়ে থাকে৷ ফজরের খানিক আগে ঘুমোতে যায়৷ সূর্য যখন মাথার উপর থেকে পশ্চিমে হেলতে থাকে, সেই সময় তাদের চোখের পাঁপড়ি নড়ে ওঠে।
এক সময় তারা নাস্তা খাবে। এই নাস্তাটা কোত্থেকে এলো সেই খবর কিন্তু তাদের নেই। সাত সকাল থেকে যে মা রান্নাঘরে পড়ে আছেন, তাকে একবার জিজ্ঞেসও করবে না – মা, তুমি খেয়েছো?, বরং তাদের ভাবটা এমন, নাস্তা খেয়ে উদ্ধার করে দিলাম!
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলে চেঁচিয়ে উঠে, মা! দুপুরে কী রান্না করেছো?, কখনো নিজেই উঠে একটু পাতিল নেড়েচেড়ে দেখবে, এরপর পছন্দ না হলে ‘এই জিনিস মানুষে খায়’ টাইপের মুখ বাঁকিয়ে আবার বিছানায়।
প্রাকৃতিক ডাক ছাড়া অথবা অত্যাবশ্যকীয় কোন জরুরত ছাড়া এদের দিন,রাত সব বিছানাতেই কাটে। বাসায় কোন মেহমান এলো, কে বাইরে গেলো, মায়ের উপর দিয়ে কী ঝামেলা যাচ্ছে – এইসবের কোন খোঁজ খবর তাদের থাকে না।
সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশিরভাগ সময় পড়ে থাকা এই ‘সন্তানগুলো’ যখন আবার পোস্ট দেয়, ‘আমি ঘুমিয়ে থাকি, আমার খবর থাকে না’, তখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই প্রজাতির অন্যান্য প্রাণীরা ‘হা হা’ ‘হু হু’ করে তাকে উৎসাহ দেয়।
তারা আবার বাবা-মা’দের নিয়েও ট্রল করে। মা বকা দিলে তা নিয়েও ফেইসবুকে মজা লুটে। মা হলো তাদের কাছে কাজের লোক আর বাবা টাকার মেশিন। চাহিদামত কিছু একটা না পেলে খানা বন্ধ করে গুম হয়ে পড়ে থাকবে। এর নাম তারা দেয়, অভিমান!
তাদের মন-পসন্দ খাবার তৈরি করতে গিয়ে বয়স্কা মা অথবা মেহমানের আয়োজন করতে গিয়ে ঘর্মাক্ত বৃদ্ধা – তাদের অন্তরে কোন অনুভূতি তৈরি করে না। পঙ্গুর মত তারা চেয়ে চেয়ে দেখে।
বাহির থেকে আসা শ্রান্ত বাবার পানে তাদের একটাই প্রশ্ন, ‘এনেছো?’, অথচ এক গ্লাস পানি তাদের হাতে উঠে না।
অসুস্থ এক প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে। এই প্রজন্মই আবার ভুল-ঠিকের বিচার করে! সভ্যতা আর ভদ্রতা শেখায়! বাবা-মাকে ন্যূনতম হিসেব না করা এই প্রজন্মের ফলাফলটা কী? একটু ভালোভাবে তাকিয়ে দেখুন, আপনার হাসিখুশি ফ্রেন্ডে ভরা লিস্টেও এই পঙ্গু প্রজন্মের দৃষ্টান্ত পাবেন অঢেল!
(এহছান খান পাঠান, নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক অর্থনীতির কাগজ)