আলোকিত রাজনীতিবিদ শেখ হাসিনার জন্মদিন

আলোকিত রাজনীতিবিদ শেখ হাসিনার জন্মদিন

ড. সৈয়দ নাজমুল হুদা:

১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ হাসিনা জন্মগ্রহণ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়, ‘জন্মদিন আসে বারে বারে /মনে করাবারে -/ এ জীবন নিত্যই নূতন / প্রতিপ্রাতে আলোকিত / পুলকিত দিনের মতন।’ ১৯৯৬ সালে বেগম সুফিয়া কামাল বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা দিয়ে আশীর্বাণী দিয়েছিলেন। ‘শেখ হাসিনা সাহসের সাথে সংগ্রামে এগিয়ে অগ্রবর্তিনী হয়ে আমাদের শ্রদ্ধা অর্জন করছেন আর ঘাতক মুষক গোপন থেকে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পদদলিত হবার আকাঙ্খায় কৃমিকীট হয়ে আত্মগোপন করছে। আল্লাহ সহায় হোন, শেখ হাসিনা অজেয় অমরত্ব লাভ করে সর্বদলের বিজয়নী হয়ে বিরাজ করুন এই প্রার্থনা আজ সর্বজনার কাছে।’

সময় গড়িয়েছে আর শেখ হাসিনা ক্রমেই সমৃদ্ধ হয়েছেন । আজ পৃথিবীর সর্বত্র শেখ হাসিনাকে নিয়ে আলোচনা হয়। এটা একদিনে হয়নি। তিনি অনেক কারণে বাঙালি জীবনে জরুরি; জরুরি থাকবেন। সৃষ্টিশীলতা তাকে অমরত্ব দান করবে। এটাও তিনি অসম্ভব পরিশ্রম করে অর্জন করেছেন।

রাজনীতিতে তার নিত্য যাওয়া আসা ছিল। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের আগাম বার্তা ছিল না। এবারের জন্মদিনে তিনি দেশের বাইরে নিউইর্য়কের জাতিসংঘের ৭৪তম অধিবেশনে খুবই ব্যস্ততম সময় পার করছেন। গত ৫ দিনে গড়ে ৪ থেকে ৫টি বড় গুরুত্বপূর্ণ সভায় যোগদান করেছেন। এ যেন সেই রবীন্দ্রনাথের অমর গীতি কবিতার অমোঘ উচ্চারণ। ‘ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করে প্রভু’। শেখ হাসিনা একমাত্র সরকারপ্রধান যিনি সোজাসুজি স্পষ্ট করে বলতে পারেন। এটাও তার জন্মসূত্রে যাওয়া। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে আমরা দেখতে পেয়েছি। আমি কথা চিবাই না, যা ভালো মনে করে ফেলি, ভুল হলে তা সংশোধন করি। বঙ্গবন্ধু কন্যা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রক্ষমতায় নিয়ে আসেন।

সরকার গঠন করার চার মাসের মধ্যে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছিলেন। পিতা বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালের জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে দৃপ্তকণ্ঠে বলেছিলেন, ‘বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত, শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।’ ১৯৯৬ সালের তৎকালীন বিশ্বরাজনীতির প্রেক্ষাপটে অনেক কিছুই বলা না বলার বিষয় থাকতো। বিশ্বসভায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল খুবই দুর্বল, নতজানু। সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৪ অক্টোবর একবারেই স্পষ্ট করে বলে দিলেন, ‘বিশ্বব্যাপী পুঁজি, বাণিজ্য ও সেবাপ্রবাহের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার অনুকূলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরাম এবং সেমিনারে জোরালো যুক্তি প্রদর্শন করা হয়। আমরা মনে করি, এর পাশাপাশি শ্রমিকদের গমনাগমনের ওপর বিধি-নিষেধের নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। এ বিষয়টি নিশ্চিতভাবে খোলামনে কোনোরূপ বৈষম্য ছাড়াই যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা উচিত। ইতিহাস দৃঢ়ভাবে সাক্ষ্য দেয় যে, উন্নত জীবনের সন্ধানে অভিবাসনকারীরা নিজ নিজ অভিবাসনের দেশকে দরিদ্র নয়; বরং বিত্তশালী করেছে, উন্নত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে স্থাপিত প্রতীকটি যা ফ্রান্সের জনগণ যুক্তরাষ্ট্রকে উপহার দিয়েছিল, তা বিশ্বব্যাপী মুক্তির প্রতীক-মূর্তি হিসেবে স্বীকৃত। আমাকে বলা হয়েছে যে, মেঘমুক্ত দিনে জেএফকে বিমানবন্দরে অবতরণের সময় আকাশ থেকে এটি ক্ষণিকের জন্য দেখা যায়। এই মূর্তি-প্রতীকের একটি দিক আমেরিকার বাইরে ততটা সুবিদিত নয়। এই মূর্তির পাদদেশে রয়েছে একটি ভাঙা শিকল, যার প্রতীকী অর্থ হচ্ছে স্বাধীনতার পুনঃআবিষ্কার।

নিউইর্য়ক এবং এই বিশ্ব সংস্থা নিঃসন্দেহে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে আন্তর্জাতিক অভিবাসনের ইস্যুটি উপস্থাপন করার জন্য যথার্থ স্থান। ১৯৯৬ সালের জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া সেই ভাষণের প্রতিটি অধ্যায় সৃজনশীল কূটনৈতিক দ্যোতনায় পরিপূর্ণ ছিল । সেই ঐতিহাসিক ভাষণের কয়েকটি এই পরিসরে উৎকলন করা যেতে পারে ।

১৯৯৬ সালে বেগম সুফিয়া কামাল শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা দিয়ে আশীর্বাণী দিয়েছিলেন এইভাবে, ‘শেখ হাসিনা সাহসের সাথে সংগ্রামে এগিয়ে অগ্রবর্তিনী হয়ে আমাদের শ্রদ্ধা অর্জন করছেন আর ঘাতক মুষক গোপন থেকে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পদদলিত হওয়ার আকাঙ্খায় কৃমিকীট হয়ে আত্মগোপন করছে । আল্লাহ সহায় হোন, শেখ হাসিনা অজেয় অমরত্ব লাভ করে সর্বদলের বিজয়িনী হয়ে বিরাজ করুন এই প্রার্থনা আজ সর্বজনার কাছে’। ১৯৬২ সালের দুর্বার ছাত্র আন্দোলন ও স্বায়ত্তশাসন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবির সমর্থনে দেশব্যাপী গণঅন্দোলনের সময় ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। শেখ হাসিনা ছাত্র আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন । ১৯৬৬-৬৭ সালে তিনি ইডেন কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা মহাবিদ্যালয়) ছাত্রী সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সহ-সভানেত্রী নির্বাচিত হয়ে জনপ্রিয়তা প্রমাণ করেন। ১৯৬৯ সালের আইয়ুববিরোধী গণঅভ্যুত্থানে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ’৬৯ সালের রাজপথের মিছিলে তাকে খুবই সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। আশির দশকে (১৯৮১) বাংলাদেশের রাজনীতির এক জটিল , কুটিল ও ভয়ঙ্কর ত্রাসমূলক ফ্যাসিস্ট সামরিকতন্ত্র ও তাদের আজীবন সঙ্গী ধর্ম ব্যবসায়ী, মিথ্যাচারী ও সুবিধাবাদী রাজনীতির আর্বতের মধ্যে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সিভিল সুশাসনের ঝান্ডা হাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আাবর্ভূত হন। আন্তর্জাতিক মহলের এদেশীয় সাঙ্গতরা আমাদের মধ্যে আত্মঘাতী মূঢ়তার শক্তিকে নানাছলে উসকানি দিয়ে চলেছে (১৫ ফেব্রুয়ারি, দৈনিক ইত্তেফাক)।

১৯৮১ সালের ১৭ মে দীর্ঘ ছয় বছর যন্ত্রণাদগ্ধ প্রবাসী জীবন কাটিয়ে স্বদেশে ফিরে আসেন। আমরা কি এখন ভাবতে পারি, শেখ হাসিনা কত দুঃখ কষ্ট একজীবনে পেয়েছেন। শুনেছি বঙ্গবন্ধু’র হত্যাকাণ্ডের কথা জানিয়েছিলেন। সেই সাথে বিশ্ববাসী জানিয়ে দিয়েছিলেন, পৃথিবীর বড় বড় দেশের নেতারা সেটা উপলব্ধি না করলেও বিশ্বের সব অভিবাসীর ন্যায়সঙ্গত লড়াইয়ের শেখ হাসিনা আছেন এবং সব সময় থাকবেন। ১৯৬২ সালের দুর্বার ছাত্র অন্দোলন ও স্বায়ত্তশাসন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবির সমর্থনে দেশব্যাপী গণঅন্দোলনের সময় ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন । শেখ হাসিনা ছাত্র আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৬-৬৭ সালে তিনি ইডেন কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা মহাবিদ্যালয়) ছাত্রী সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সহ-সভানেত্রী নির্বাচিত হয়ে জনপ্রিয়তা প্রমাণ করেন। ১৯৬৯ সালের আইয়ুববিরোধী গণঅভ্যুত্থানে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ’৬৯ সালের রাজপথের মিছিলে তাকে খুবই সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। আশির দশকে (১৯৮১ ) বাংলাদেশের রাজনীতির এক জটিল, কুটিল ও ভয়ঙ্কর ত্রাসমূলক ফ্যাসিস্ট সামরিকতন্ত্র ও তাদের আজীবন সঙ্গী ধর্ম ব্যবসায়ী, মিথ্যাচারী ও সুবিধাবাদী রাজনীতির আর্বতের মধ্যে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সিভিল সুশাসনের ঝান্ডা হাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর্বিভূত হয়েছিলেন ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘গণতন্ত্রের আলোকবর্তিকা’, বলিষ্ঠ একজন সমাজ সংস্কারক। ইউনেস্কোর সাবেক প্রধান ইরিনা বোকোভা বলছিলেন, ‘সাহসী নারী’ হাসিনা সবাইকে পথ দেখাচ্ছেন। ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদর দপ্তরে শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। নারী ও কন্যাশিশুদের শিক্ষা প্রসারে স্বীকৃতি স্মারক ‘শান্তি বৃক্ষ’ দেয়ার সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ইউনেস্কোর প্রধান। শেখ হাসিনাকে ‘সাহসী নারী’ অভিহিত করে জাতিসংঘের এ সংস্থাটির প্রধান বলেছেন, নারী ও কন্যাশিশুদের ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব মঞ্চের ‘জোরালো এক কণ্ঠ’। শেখ হাসিনার নিপীড়িত মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। গফরগাঁওয়ের রিকশাচালক শেখ হাসিনার জমি কিনে থুয়ে যায়। পাঠকদের অনেকই হয়তো জেনে থাকবেন গফরগাঁওয়ের সেই হাসমত আলীর কথা, একজন গরিব রিকশাচালক। মৃত্যুর আগে হাসমত আলী তার স্ত্রী রমিজা খাতুনকে শেষ ইচ্ছার কথা জানিয়ে গিয়েছিলেন।

২০১০ সালের ৪ এপ্রিল কালের কণ্ঠের সাংবাদিক হায়দার আলীকে জড়িয়ে ধরে রমিজা খাতুন কাঁদলেন। বললেন, ‘মরার আগে কাদিরের বাপ (হাসমত আলী) জমির দলিলডা হাতে দিয়া আমারে কইছিল, আমি মইরা গেলে আমার এতিম মাইডার কাছে (শেখ হাসিনা) জমির দলিলটা পৌঁছাইয়া দিবি। অহন দলিলডা তার হাতে দিয়া যাইতে পারলে আমি মইরাও শান্তি পামু।’

শেখ হাসিনা বোঝেন জনগণের সুখ দুঃখ, বোঝেন তাদের নাড়ির টান। যে কারণে প্রয়াত কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান গাফফার চৌধুরীর হাত ধরে বলেছিলেন , ‘গাফ্ফার দোহাই তোমায়, হাসিনার সমালোচনা করো না। দীর্ঘকাল ধরেই তো চারিদিকে তাকিয়ে দেখছি, এত জ্ঞানী গুণী, ডান-বামের বড় বড় নেতা। মুখে হাসিনার এত নিন্দা ও সমালোচনা । কিন্তু ক্রাইসিসের সময় হাসিনা ছাড়া কাউকে দেখি না।’

ড. সৈয়দ নাজমুল হুদা,

সহকারী অধ্যাপক,  

সহকারী প্রক্টর ও

সাবেক হাউস টিউটর, মির্জা আজম হল বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর

Share This Post